অর্থাভাবে আটকে আছে আশি বছরের বৃদ্ধার অপারেশন

প্রকাশিত: ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২০

অর্থাভাবে আটকে আছে আশি বছরের বৃদ্ধার অপারেশন

লুৎফুল করিম রাজ্জাক

জৈন্তাপুর উপজেলার ফেরিঘাট সংলগ্ন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে বহমান সারি নদী। সেই নদীর তীর ঘেঁষে প্রতষ্ঠিত একটি গ্রাম কাটাখাল। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা ছোট্ট বসতভিটাটি হাফিজ বদরুল ইসলামের। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথেই হাজির হলাম সেই বাড়িতে। দেখা মিলল মৃত হাফিজ বদরুলের বড় ছেলে তানভিরের। চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। বিবর্ণ পোষাকে আবৃত শরীরে অভাব জিনিসটা বুঝাই যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া তানভির বর্তামানে বাড়িতেই অবস্থান করছে তার ছোটভাই ও ফুফুকে নিয়ে। ফুফু শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় রান্না-বান্নাসহ ঘরের যাবতীয় কাজ করছে সে নিজে। এত ছোট ছেলে ঘরের সকল কাজ করছে দেখেই চোখে পানি চলে আসল। কিছু করার নেই পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে। কারণ তার মা তার দাদীকে নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।
গ্রামের সব থেকে অসহায় পরিবার হয়ত সেটি। তাদের পারিবারিক অবস্থা জানলে যে কারো চোখে পানি আসতে বাধ্য।

তানভিরের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তাদের পারিবারিক চিত্র প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক ছিল।
তার বাবা হাফিজ বদরুল ইসলাম জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে দীর্ঘদিন আশরাফুল উলুম নিজপাট মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। জাতিকে শিক্ষিতকরণের এক অদম্য বাসনা নিয়ে ছুটে চলা বদরুল ইসলামের জীবন এক ঝড়েই ওলটপালট হয়ে গেল। বদলে গেল জীবনের রঙ। পরিবারে নেমে আসল অমাবস্যা। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন বদরুল। একসময় তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। সময়টা ছিল আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। মৃত্যুকালে হাফিজ বদরুলের ছোট ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৮ মাস। তানভির তারা তিন ভাই তখন খুবই ছোট। ৪ ফুফুর স্বাভাবিকভাবে বিয়ে হলেও বিয়ের পর ফুফু একজনেরও প্যারালাইসিস হলো। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় টিকলো না স্বামীর সংসার। ফিরে আসলেন বাবার বাড়িতে। এদিকে ছেলের মৃত্যু অন্যদিকে আদরের মেয়ের অসুস্থতা সব মিলিয়ে এত শোক সইতে না পেরে স্টোক করলেন হাফিজ বদরুলের মাতা আয়েশা বেগম। ৮০ বছরের এই বৃদ্ধা মহিলার জীবনটা খুবই কষ্টের।
এক ছেলে মারা গেল, এদিকে অন্যছেলের কোন খবর নেই। বিধবা পুত্রবধূ, এতিম ৩ নাতি আর প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে মোট ৬ জনের পরিবারে নেই উপার্জনের কেউ। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা আর প্রতিবন্ধী ভাতাই তাদের পরিবারের খরচ বহনের একমাত্র পাথেয়।
স্টোক, ডায়াবেটিকসহ নানাবিদ রোগ বাসা বেঁধেছে বৃদ্ধার শরীরে। এদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে বাড়ির আঙিনায় পড়ে ভেঙে ফেলেন কোমর। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের ভর্তিটাও হয়েছে করুণভাবে। কোমরের হাড্ডি ভাঙ্গার পর অভাবের তাড়ণায় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়েই চিকিৎসা চালান। অল্পকিছু ভাতার টাকা দিয়ে কি আর উন্নত চিকিৎসা করা যায়?
সর্বশেষ হাফিজ বদরুলের একান্ত বন্ধু, আরব আমিরাত প্রবাসী হাফিজ আব্দুল্লাহ বিষয়টি জানলে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেন। উনার সহায়তায় ভর্তি করানো হয় ওসমানীতে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ