ধর্ষক আজাদ যেন তার কুখ্যাত পিতার উত্তরসূরী

প্রকাশিত: ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২০

ধর্ষক আজাদ যেন তার কুখ্যাত  পিতার উত্তরসূরী

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সরেজমিন রিপোর্টঃ
.
কানাইঘাটের আলোচিত গণধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা আজাদ কুখ্যাত খুনি নূর উদ্দিনের ছেলে। এই নূর উদ্দিন আমার তিন চাচার খুনিদের অন্যতম।

বিষয়টি একটু আগে আব্বাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ঘটনা ১৯৭৬ সালের ২ জুলাই রাত ১২ টার দিকের। আব্বার চোখ মুখে এখনও যেন পুরো ঘটনা স্পষ্ট।

মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু অস্ত্র চলে আসে ডাকাতদের হাতে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এইসব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। ডাকাতরা এসব অস্ত্র দিয়ে এলাকায় হরহামেশাই ডাকাতি করতো। দুঃখের ব্যাপার হলো, যে অস্ত্র দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেসব অস্ত্র দিয়েই স্বাধীন দেশের মানুষদের হত্যা, ডাকাতি করা হতো।

তখন বর্ষাকাল। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি। ডাকাতরা নৌকা দিয়ে এসেছিল উপজেলার ৫নং বড়চতুল ইউনিয়নের এক শান্ত গ্রাম দলকিরাইয়ে। তাদের মূলত উদ্দেশ্য ছিল দুটি। একটি হলো, আমার বড় দাদা বৃহত্তর জৈন্তার এক মহান শিক্ষা গুরু মাস্টার হবিবুর রহমানকে (ধলাই মাস্টার) হত্যা এবং দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের বাড়িতে ডাকাতি করা। কিন্তু ডাকাতরা বড় দাদাকে হত্যা করতে পারেনি, ঢাল হয়ে দাঁড়ান তাঁর তিন ভাতিজা আলমগীর, আজাদ এবং আওলাদ। তিন ভাই জীবন দিয়ে রক্ষা করেন তাদের চাচা এবং আমাদের পুরো পরিবারকে। পরে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

এই ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারলাম, মাস্টার হবিবুর রহমানের সাথে জনৈক আনফর আলীর ১৮ বিঘা জমি নিয়ে একটি বিরোধ ছিল। আনফর আলীর ডান হাত ছিল বশির মোল্লা নামের এক লোক। এদের প্রত্যক্ষ মদদে ডাকাতরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে এই ১৮ বিঘা জমির মালিক আদালতের মাধ্যমে আমার দাদা হন।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন নৌকা যোগে গিয়ে সিলেটের এসপি আমাদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। নিহত আলমগীর, আজাদ এবং আওলাদ এর পিতা আমার আরেক দাদা ইউসুফ আলী (হেডক্লার্ক) প্রথমে মামলা করতে রাজি হননি। তিনি ব্রিটিশ পিরিয়ডের এনট্রেস (বর্তমান এসএসসি) পাশ ছিলেন। শোকাহত এ পিতার বক্তব্য ছিল, মামলা করে আমার ছেলেদের তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু বড়দাদা মামলা করেন এবং এ মামলায় অনেকের সাজা হয়। কিন্তু খুনিরা পরবর্তীতে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়।

নির্মম এ হত্যান্ডের স্বীকার হওয়া তিন ভাইয়ের বয়বৃদ্ধ মা এখনও বেঁচে আছেন। তাঁদের দুই ভাই জাহাঙ্গীর, আজম (চাচা) এবং দুই বোন রুনি, রুবি (ফুফু) ভাই হারানোর শোকে আজও নিশ্চয়ই কাতর।

আমার তিন চাচা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম খুনি নূর উদ্দিনের ছেলে ধর্ষক আজাদ তার পিতার কুকর্মের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সেদিন নূর উদ্দিনের সঠিক বিচার হয়নি, আজ হয়তো আজাদেরও হবে না। এভাবেই হয়তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম খুনি, ধর্ষকদের হাতে আমরা জিম্মি থাকবো।
সূত্র #কপি পেষ্ট from জনায়েদুর রহমান

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ