পুলিশ সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছতার স্বাক্ষর, সিলেট বাসীর প্রশংসায় এসপি ফরিদের পথচলা

প্রকাশিত: ৩:১০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২১

পুলিশ সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছতার স্বাক্ষর, সিলেট বাসীর প্রশংসায় এসপি ফরিদের পথচলা

হাবিবা আক্তার///

 

৬ই নভেম্বর। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের ফেসবুক টাইম লাইনে কয়েকটি ছবি পোস্ট দিয়ে লেখা হয়; ‘শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাবীরা চূড়ান্ত ফলাফলে বিজয়ী হবে।’- এই স্ট্যাটাসের নিচে দেয়া হয়েছে কনস্টেবল পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রার্থীদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার ছবি। এর মধ্যে একটি ছবি নজর কেড়েছে সবার। পুলিশ লাইনের ফটকে খোলা আকাশের নিচে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে আছেন সিলেটের পুলিশ সুপার। নিজেই করছেন নিয়োগ পরীক্ষার তদারকি। দেখে দেখে যোগ্যদেরকেই তিনি বেছে নিচ্ছেন পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ণদের। তবে- ওইদিন কনস্টেবল পরীক্ষায় আগ্রহীদের উপস্থিতি দেখে সিলেটের মানুষ হতবাক হয়েছেন। সাধারণত সরকারি চাকরি কিংবা পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীতে অংশগ্রহণে আগ্রহ কমই থাকে।ওইদিনের চিত্র আশা জাগাচ্ছে সিলেটবাসীকে। কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। সরকারি চাকরিতে সিলেটের মানুষের আগ্রহ বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সবাই। আর এই নিয়োগে শতভাগ সফল হয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন। নিজেই মাঠে থেকে একেক করে পরবর্তী ধাপের জন্য অংশগ্রহণকারীদের সিলেক্ট করেন। নিয়োগ নিয়ে হয়নি কোনো বাণিজ্য কিংবা গ্রহণ করা হয়নি কোনো তদবিরও। যারাই মাঠের পর লিখিত ও মৌখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারাই চূড়ান্ত ভাবে সিলেক্ট হয়েছেন। এজন্য এবারের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছেন সিলেটের পুলিশ সুপার। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া উইং শাখা জানিয়েছে- সিলেট জেলায় ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় কয়েক হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২৮৮০ জন প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট হয়ে পরবর্তী ধাপে পৌঁছায়। পুলিশ সুপার নিজেই মাঠে থেকে এসব অংশগ্রহণকারীকে সিলেক্ট করেন। এই সময় মাঠ পর্যায়েই ৬টি ধাপে অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওখান থেকে ৫১৮ জনকে লিখিত পরীক্ষায় ডাকা হয়েছিল। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সিলেক্ট হয় ১৭১ জন। এর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় সিলেক্ট হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে ৬ জন নারীও রয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- এই ৭২ জনকে এখন ৬ মাসের জন্য ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে। ট্রেনিং শেষে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হবে। তবে- সিলেটের এই কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা সবার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কারণ- এই পরীক্ষায় কোনো নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি। কনস্টেবল পদে যারাই সিলেক্ট হয়েছে তারা যোগ্যতা ও মেধায়ই হয়েছেন। তদবিরেও কাউকে সিলেক্ট করা হয়নি। এ কারণে এবার সিলেটে মাঠেই সব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল জানানো হয়। যে নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো প্রশ্ন ওঠেনি- সেখানে নিয়োগকে বিতর্কিত করতে কোচিংয়ে নামে টাকার ধান্ধায় মেতে উঠেছিল গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় এলাকার বাসিন্দা ও বহিষ্কৃত পুলিশ সদস্য খুরশেদ। সে নানাভাবে টাকা গ্রহণের মাধ্যমে আগ্রহীদের প্রতারিত করছিল। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ না এলেও বিষয়টি নজরে আসার পর সিলেটের পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। খুরশেদকে ধরতে পুলিশ ওই এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; গোয়াইনঘাটে বাড়ি ওই পুলিশ সদস্য এর আগে পুলিশে নিয়োগের নামে টাকা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সে দীর্ঘদিন কারাবরণও করেছিল। সম্প্রতি সিলেট জেলা পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সে একই ধান্ধা শুরু করে। এখন সে এলাকায় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে এবার জেলার পুলিশ সুপার মাঠে থেকেই প্রার্থী সিলেক্ট করেছেন। পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে সে কারণে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে সিলেটে। যারা এখন পর্যন্ত পরবর্তী ধাপের জন্য সিলেক্ট হয়েছে তারা নিজেদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়েই সিলেক্ট হয়েছে। এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে পুলিশকে একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন- কেউ এই নিয়োগ পরীক্ষাকে বিতর্কিত করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নজরদারীও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন; পুলিশে নিয়োগে টাকার খেলা নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্য নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতার বিষয়টি অভিভাবকদের অনুপ্রাণিত করেছে। কেউ যোগ্য না হলে তাকে সিলেক্ট করার কোনো কারণ নেই। এ কারণে সন্তানকে নিয়ে এসে অনেক অভিভাবক ফিরেও গেছেন। কিন্তু তারা সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। নিজেরাও বিভিন্ন ভাবে লবিং করে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের কোনো পথ খুঁজে পাননি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ