ক্যাশিয়ার আশরাফুলের কাছে জিম্মি কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কৈফিয়ৎ তলবের নোটিশ

প্রকাশিত: ৯:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২০

ক্যাশিয়ার আশরাফুলের কাছে জিম্মি কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কৈফিয়ৎ তলবের নোটিশ

কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ 

মোঃ আশরাফুল ইসলাম ১৯৮৭ সালে টাইপিস্ট পদে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রথম যোগদান করেন। পরবর্তীতে স্ব-বেতনে ২০১১০ সালে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় তার তেলেসমাতি খেলা, বর্তমানে এই দপ্তরটি এখন তার নিয়ন্ত্রণে চলছে বলে অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ তুলেছে। তার ঘুষ দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে সরোজমিনে নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বর্তমানে এই অফিসটি ক্যাশিয়ার আশরাফুল ইসলাম জিম্মি করে রেখেছে, তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, তথ্য গোপন সরকারি তহবিল তামাদি করণ সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি এটাও বলেন, তার এসকল কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালা ধারা ৪ এর (২) উপবিধি অনুযায়ী গত ০৬/০৭/২০২০ তারিখে ৪৬.০৩.৫০০০.০৬১.১৪.৬৯.১৯-০৭ স্মারক মতে তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে যা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাকে যথাযথ জবাব প্রদানের কথা বলা আছে। উক্ত কৈফিয়ৎ তলব পত্র মতে দেখা গেছে চলতি বছরের জুন ফাইনালে নির্বাহী প্রকৌশলী কে বিপদে ফেলার জন্য সুকৌশলে ৩৭ জেলার পানি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম উৎপাদক নলকূপ স্থাপন কাজের ৯,৯৮,৭০১/-টাকার চতুর্থ চলতি বিল বিভাগীয় হিসাব রক্ষক ৩০/০৬/২০২০ তারিখ রাত ৮.৪৫ মিনিটের সময় অনুমোদনের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে প্রেরণ করেন, বিলটি নির্বাহী প্রকৌশলী অনুমোদন করে রাত ৯.০০ ঘটিকার সময় সকল বিলের চেকটি ক্যাশিয়ার আশরাফুলের কাছে প্রেরণ করেন, চেকটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে iBAS++ সিস্টেমে পোস্টিং করানোর জন্য। ক্যাশিয়ার আশরাফুল নিবার্হী প্রকৌশলীকে বিপদে ফেলতে এবং ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের সাথে আর্থিক লেনদেনের বনিবনা না হাওয়ায় তিনি ওই দিন রাতে পোস্টিং দেন নাই যে কারণে উক্ত সমুদয় অর্থ তামাদি হয়ে যায়। অন্যদিকে ওয়াস বেসিন নির্মাণ কাজের জন্য খাইরুন অ্যান্ড কোম্পানির নামে বরাদ্দকৃত ২,২৬,৮০০/-টাকার বিলের চেকটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে iBAS++ সিস্টেমে পোস্টিং করানোর জন্য তার কাছে দেওয়া হলে সেটিও তিনি সঠিক টাইমে পোস্টিং দেন নাই যার ফলে এই অর্থটিও ও তামাদি হয়ে যায়। পরবর্তীতে নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর ক্যাশিয়ার কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি যথা সময়ে উক্ত চেকগুলো পোস্টিং দিয়েছি। পরবর্তীতে উক্ত ঠিকাদারের একাউন্টে চেকের অর্থ না পৌঁছালে ঠিকাদাররা অফিসে অভিযোগ দায়ের করলে গত ০২/০৭/২০২০ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী ফাইল ঘাটাঘাটি করতে গেলে দেখতে পান যে অফিসের একটি নির্দিষ্ট কোড রয়েছে সেই কোডে পোস্টিং না দিয়ে অন্য কোডে পোস্টিং দিয়েছেন। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ক্যাশিয়ার সুপরিকল্পিতভাবে আমাকে বিপদে ফেলার জন্য সর্বমোট ১২,৪০,১০২/-টাকা সম্পূর্ণরূপে তামাদি করে দেন। যার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, ক্যাশিয়ার আশরাফুল একজন দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি তিনি প্রতিটা ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটা বিলের উপর থেকে প্রচুর পরিমাণ নগদ অর্থ অগ্রিম হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি প্রতিবেদককে এটাও দেখালেন সিসি ক্যামেরার বহির্ভূত স্থান সিঁড়ি ঘরের মধ্যে ঠিকাদারদের কে ডেকে নিয়ে আর্থিক লেনদেন করে যাচ্ছেন। তার এসকল ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে সকল ঠিকাদাররা প্রতিনিয়ত আমার কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন। আমি অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর থেকেই দেখে আসছি তার দুর্নীতির সার্বিক চিত্র এই ক্যাশিয়ার আশরাফুল ইসলাম তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে ফেলেছেন তাকে অফিসের কোন ব্যক্তি ভালো চোখে দেখেন না। এছাড়াও তার দুইটা জন্মতারিখ রয়েছে এটা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং দুইবার এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট এখন পর্যন্ত অত্র দপ্তরের আসে নাই এবং প্রকাশিত হয় নাই, কারণ তিনি যেভাবেই হোক এটাকে উপরমহল কে ম্যানেজ করে ধামাচাপা দিয়েছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এভাবেই তিনি প্রচুর সম্পদের পাহাড় জমিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে কারণ তিনি একই স্থানে দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি করে যাচ্ছেন যা কিনা সরকারি আইন বহির্ভূত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সাধারণত একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় থাকতে পারে না অথচ তিনি ২০ থেকে ,২৫ বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। যার ফলে বড় ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রচুর অর্থ যা কল্পনাতীত। ক্যাশিয়ার আশরাফুল শুধু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে মধ্যেই আধিপত্য বিস্তার করছে না, তার আধিপত্য ও ঘুষ দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অফিসের বাইরের কিছু ব্যক্তিও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা সার্বক্ষণিকভাবে তার দুর্নীতির বিষয়টি যেন কোনভাবে প্রকাশ না পায় সেজন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেন তাদের পিছনে। তার ঘুষ দুর্নীতির বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলার সর্বস্থানের লোকজন জানেন অথচ কেউ তা প্রকাশ করেন না তার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে তিনি অফিসের কাউকে তোয়াক্কা করেন না, নিজেকে তিনি অনেক বড় মাপের মানুষ হিসাবে দেখিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ ক্যাশিয়ার আশরাফুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলীসহ উক্ত দপ্তরের সকল কর্মকর্তাদের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে ঠিকাদাররা বলেন, অনতিবিলম্বে উক্ত ক্যাশিয়ারকে কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করা হোক এবং তার জন্মতারিখের তদন্তের বিষয়টি প্রকাশের জন্য বিনীত অনুরোধ জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ