সয়াবিন তেলে ডাবল সেঞ্চুরি, লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার

প্রকাশিত: ১:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২২

সয়াবিন তেলে ডাবল সেঞ্চুরি, লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার

ফাহিমা বেগমঃ

সিলেটে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। নগরীর বিভিন্ন বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মাছ, মুরগি, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুরই দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই চাহিদামতো বাজার করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

সিলেটে খোলা সয়াবিনের কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা সয়াবিনের কেজি ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও অদৃশ্য কারণে বাড়ছে সেই দাম।

বুধবার (২ মার্চ ) বিকালে সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী কালীঘাট ও বন্দর বাজারে ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে খোলা ও বোতলজাতকরণ সয়াবিন তেলের দামে ১৫ থেকে ২০ টাকা পার্থক্য দেখা যায়। ওই বাজারের সুমন স্টোরের বিক্রেতা নিকেশ সাহা বলেন,

খোলা সয়াবিন তেল তিন সপ্তাহে ৩০ টাকা বেড়ে ২০০ কেজি হয়েছে। পাম তেল ১৭৫, কোয়ালিটি তেল ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বোতলজাতকরণ সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজলক্ষ্মী স্টোরের বিক্রেতা নুপুর দাস বলেন, ৫০ কেজির চিনির বস্তা গত সপ্তাহে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় কিনেছি। এই সপ্তাহে ৩ হাজার ৮২০ টাকায় কিনেছি। তবে আমরা চিনি ৮০ টাকা কেজি দামেই বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, বড় মসুর ডাল ৯৫, দেশি মসুর ডাল ১২০, মাসকলাই ১৮০, ভাঙ্গা মাসকলাই ১২০, মুগডাল ১৩০, অ্যাংকার ৫০, বুটের ডাল ৮০, খেসারির ডাল ৭০, মটর ১২০, ছোলা বুট ৭৫, খোলা আটা ৩৫, প্যাকেট ৪০ কেজি বিক্রি হচ্ছে।

লালবাজারের সবজি বিক্রেতা হাসান ফকির বলেন, সব প্রকার সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

তিনি জানান, শসা ৩০, বেগুন ৪০, টমেটো ৩০, গাজর ২৫, কাঁচামরিচ ৪০, চিচিঙা ৫৫, মটরশুঁটি ৮০, সিম ৩৫, করলা ৮০, মুলা ৪০, লতা ৮০, কুমড়া ৫০, ঢ্যাঁড়স ১০০, পেঁপে ৩০, পেঁয়াজ পাতা ৪০, ফুলকপি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস মিষ্টি কুমড়া ৪০, লাউ ৬০ ও এক হালি কাঁচকলা ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বাজারের তোতা মিয়া জানান, মাছের দামে তেমন ওঠানামা নেই। পাঙ্গাশ ১৩০, রুই মাছ ২৪০, পাবদা ২৫০, সিলভার মাছ ১৮০, রাজপুঁটি ১৮০, পাঁচ মিশালি গুড়া ১৭০, টাকি মাছ ৩২০, চিংড়ি ৬০০, কাকিলা ৫০০, টেংরা ৪০০, মৃগেল ৩০০, কার্ফু ২৪০, শিং মাছ ৩০০, কাতল মাছ ২৮০, তেলাপিয়া ১৪০, কৈ মাছ ২৪০, বোয়াল মাছ ৫৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ওই বাজারের মুরগি বিক্রেতা রাশেদ মিয়া বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। তবে, সোনালী মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। সোনালী মুরগি ৩০০, ব্রয়লার ১৫০, কক মুরগি ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, দেশি মুরগির ডিম ৬০ টাকা হালি, ফার্মের মুরগির ডিম ৩৫ টাকা হালি, হাঁসের ডিম ৫৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

মাংস মহালের মাংস বিক্রেতা সুলতান মিয়া বলেন, মাস খানেক আগে খাসি ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছিল। এরপর আর কমেনি। খাসির মাংস ৯২০ থেকে ৯৫০ টাকা ও গরুর ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের বাদশা মিয়া বলেন, পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা করে বেড়েছে। দেশি ৪৫, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪০, রসুন ৪০, আদা ৬০, আলু ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শাহপরান বাজারে তেলের দাম দেখে চোখ কপালে তুললেন আমেনা বেগম নামের একজন গৃহিণী।

তিনি বলেন, সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। প্রতি সপ্তাহে একের পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় তো বাড়েনি। বরং করোনায় চাকরিবাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়ায়। এতে জনগণের পকেট কাটা হয়ে থাকে। যতদিন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হবে ততদিন বাজারে এই অনিয়ম হতে থাকবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এছাড়া কাঁচামালের বহু কারখানা বিদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাসায়নিক কারখানা। এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশও করা হয়েছিল। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র রমজান, এখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে নিম্নআয়ের মানুষের মনে।

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ