সিলেট ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২২
ছাদিকুর রহমান সোহেলঃ
সিলেটের প্রায় ৭ একর জায়গা জুড়ে নির্মান হচ্ছে নান্দনিক নকশা ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আধুনিক বাস টার্মিনাল। ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে শুরু হয়েছে এই নির্মাণ কাজ।
টার্মিনালে থাকবে আগমন ও বহির্গমনের দুইটি আলাদা ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও পুরনো গাড়ি মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপ শেড। যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, নামাজের জন্য কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আলাদা কক্ষও থাকবে। প্রত্যেকের রুটের জন্য হবে আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা রাস্তা। ২০১৯ সালে প্রথম এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের পরেও প্রায় দুই বছর অতিক্রম হওয়ার পরে এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি বিধায় জনভোগান্তি বিরাট আকার ধারণ করেছে।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের কদমতলীতে আধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বাস টার্মিনালকে আরোও আধুনিক করতে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় আরো দুইটি কাজ করা হচ্ছে। এর একটি হল- টার্মিনালের অবকাঠামোর উন্নয়ন, অপরটি হল ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ।
আধুনিক বাস টার্মিনাল ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণের জন্য ৫২ কোটি টাকা এবং বাস টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। টার্মিনালের কাজ শেষ হলে একই সময়ে ৮০ থেকে ৯০ টি বাস আসা যাওয়া করতে পারবে। বাস টার্মিনালে দুই তলা বিশিষ্ট দুইটি মূল ভবন থাকবে যা দেখতে ইংরেজি বর্ণমালার ‘এইচ’ আকৃতির মত দেখাবে। আগমন ও বহির্গমনের জন্য দুই তলা বিশিষ্ট ভবনে থাকবে সুযোগ-সুবিধা। প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটর সাইকেলের জন্য টার্মিনালের সামনে প্রশস্ত একটি পার্কিং থাকছে। একসাথে সেখানে ১৪০ টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম, সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও ওয়াইফাই জোন থাকবে। প্রত্যেকের রুটের জন্য নির্ধারিত রাস্তা ও ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সেখানে দর্শনার্থীরা সিলেট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাবেন। নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ পাবে বাস চালকেরা। বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দুই ভুবনে যাতায়াতের জন্য কাঁচের গ্লাসের তৈরি একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
সিসিকের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, ৫৮০০ বর্গমিটার জায়গার উপর নির্মিত বহির্গমন ভবনের নিচতলায় থাকছে ৩০টি টিকেট কাউন্টার, ইনফরমেশন বুথ ও ২য় তলায় ৯০ টি সিটের ফুডকোর্ট থাকছে।নারী-পুরুষের জন্য থাকছে আলাদা টয়লেট। ৬টি টয়লেট জোনে ৪৮ টি টয়লেট থাকবে। অসুস্থ রোগীদের প্রাথমিক সেবা কর্ণার,যাত্রীদের মালামাল রাখার জন্য সুরক্ষিত ১৩ টি ‘লকার’ জোন থাকছে এই ভবনে।
দুইহাজার বর্গমিটারে আগমন ভবনে থাকছে আগত যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। যাত্রীদের বসার জন্য থাকছে ৫১০ সেটের ওয়েটিং স্পেস। একই ভবনে ভিআইপিদের জন্য রাখা হয়েছে ৩০ টি আসন, রয়েছে দুটি আলাদা টয়লেট জোনও। ছয়তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনে তিনতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, ট্যুরিজম অফিস, পুলিশ সেন্টার, মেডিকেল টিম এবং প্রশাসনিক দপ্তর।
টার্মিনালটি ইজারাভিত্তিক পরিচালিত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। টার্মিনালটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ডালি কন্সট্রাকশন ফার্ম। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের পরও বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ না হওয়ায় কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বিশাল সড়কের প্রায় পুরো অংশ জুড়ে পার্কিংয়ে রাখা হচ্ছে শত শত গাড়ি।গাড়ির কারণে এই সড়ক দিয়ে জনসাধারণ ও গাড়ি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
সরেজমিনে কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের নির্মাণ কাজ চলায় ভেতরে গাড়ি রাখার নেই কোনো সুযোগ। চারদিকে শেড দিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। সব গাড়ী টার্মিনালের বাইরে সড়কেই পার্কিং করে রাখা। কিনব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরের পুরো সড়ক যেন বাস টার্মিনাল।কেবল সড়ক এরিয়া নয়, আশেপাশের বিপণিবিতানগুলোর সামনে, রেলস্টেশনের প্রবেশপথ ও সামনের অংশ জুড়ে ও পার্কিং করে রাখা হচ্ছে শত শত গাড়ি।
স্থানীয়রা বলছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। ফলে প্রতিদিন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শত শত মানুষকে পোহাতে হচ্ছে কঠিন দূর্ভোগ। অপরদিকে বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতি বলছে টার্মিনাল হলে যানজট সমস্যা কমে আসবে বলে মনে করে তারা।
সিসিকে প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে বাস টার্মিনালের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু সবচেয়ে বড় এই বাস টার্মিনালটি বিমানবন্দরের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনালের সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে এই টার্মিনালে। পর্যটন নগর সিলেটে আগত দর্শনার্থীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- ০১৭১২ ১৭ ৪৭ ৯৬
ইমেইলঃ- newssylbangla@gmail.com
রংমহল টাওয়ার ৪র্থ তলা বন্দর বাজার, সিলেট।
Design and developed by M-W-D