সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদসীমার ৫৫ সেঃ মিটার উপরে , লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী

প্রকাশিত: ৫:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২২

সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদসীমার ৫৫ সেঃ মিটার উপরে , লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী

হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ

 

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার ৫ টি উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। ক্রমান্বয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলমান ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, বৌলাই ও রক্তি নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার,তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। বাসাবাড়ীতে পানি উঠার পাশা-পাশি সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী সুনামগঞ্জ -বিশ্বম্ভপুর ও সুনামগঞ্জ -তাহিরপুর সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও এই পাঁচ জেলার প্রায় সবকটি গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। যার ফলে অত্রাঞ্চলের জনসাধারণ বন্যা কবলিত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এই মুহূর্তে বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন।আজ ১৬ ই জুন রোজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ জেলা শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাণিজ্যিক এলাকা সহ ৬০ ভাগ এলাকার ঘর-বাড়ীতে বন্যার পানি উঠে পড়েছে।যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে আজ রাতের মধ্যেই জেলার জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা মধ্যনগর উপজেলার অধিকাংশ বাড়ীঘরে বন্যার পানি উঠে পড়বে।
এব্যাপারে জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা ও মধ্যনগর উপজেলার একাধিক ব্যাক্তি জানান, ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাড়ীর আঙ্গিনায় পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে রাতেই ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করবে নিঃসন্দেহে।
বিশ্বম্ভপুর উপজেলার বাসিন্দা মোঃ শামীম আহমদ, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা অলিউর, তাহিরপুর উপজেলার রমিজ আলী উপজেলার রাজান ও ছাতক উপজেলার সেলিম সহ একাধিক পানি ব্যাক্তি একান্ত আলাপকালে বলেন, গত মে মাসেও বন্যার কবলে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই গত কয়েক দিন ধরে চলমান ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাড়ীঘরে পানি উঠে পড়েছে । আমরা পানি বন্দী হয়ে পড়েছি। আমাদের এই দুর্দশা লাগবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সামসুদ্দোহা জানান, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিগত এক সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ ১৬ ই জুন সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার,তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন।বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ত্রাণ জেলা প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগন বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করেছন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যার্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাদ্দকৃত ত্রাণ পাঁচটি উপজেলায় ৪৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে । এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ছাতক উপজেলার ১৭টি, দোয়ারাবাজার উপজেলার ৩টি ও সুনামগঞ্জ পৌর সভার ৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ৪ শত পরিবার এর মাঝে আজ শুকনো খাবার বিতরণ করার পাশা-পাশি ভোনা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী রয়েছে। ক্রমান্বয়ে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ