দোয়ারাবাজারে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগের নামে ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুলের হঠকারিতা : এলাকাজুড়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

দোয়ারাবাজারে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগের নামে ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুলের হঠকারিতা : এলাকাজুড়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগের নামে লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুলের হঠকারি মূলক সিদ্ধান্তে এলাকার সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। এ নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখত অভিযোগ দিয়েছেন এক ইউপি সদস্য।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,  উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বহাল থাকা স্বত্তেও পরিষদ  গঠনের তিন বছর পর প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করে ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর বিধি লঙ্গন করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ৩০ কার্য দিবসের ভিতরে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করতে হয়। লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং পরিষদ গঠনের পর বিধি মোতাবেক ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনও করা হয় তৎকালিন সময়। তখন প্যানেল চেয়ারম্যান -১ মোঃ সোহেল আহমদ মিন্টু, ২- আহসান হাবিব, ৩-হোসনে আরা নির্বাচিত হন।

জানাযায় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়কের পদে থেকে  ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম নানা অনিয়ম দুর্ণীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। ওই সময় থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ মিন্টুসহ পরিষদের অন্যান্য সদস্যরাও প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এসব বিষয়ে ইতিপূর্বে পরিষদের ৯ সদস্য সম্মিলিতভাবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনিয়ম দূর্ণীতির লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে। চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়কের পদে অধিষ্ঠিত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী সরকার পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল নিজেকে নিরাপদ রাখতে রাতারাতি নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেন।

ইউপি সদস্য সোহেল আহমদ মিন্টু জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শুরু থেকেই নানা অনিয়ম দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আমরা এর বিরুদ্ধাচরণ এবং সবসময় প্রতিবাদ করে এসেছি। ইউনিয়ন পরিষদ বিধি অনুযায়ী পরিষদ গঠনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। বিগত সময়ে অনিয়ম দুর্ণীতির বিরুদ্ধাচরণ করায় তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে আবারও প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং বিধিমত পরিষদ পরিচালনা করার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা মনে করি চেয়ারম্যানের এমন সিদ্ধান্তে একজন অযোগ্য এবং আইন অমান্যকারীর পরিচয় দিয়েছেন।

৯নং ইউপি সদস্য মোঃ ওমর গনি বলেন,চেয়ারম্যান চেয়েছিলেন প্যানেল চেয়ারম্যান তার সকল অনিয়ম দুর্নীতির সহযোগী হয়ে কাজ করুক। কিন্তু
প্যানেল চেয়ারম্যান সেই সহযোগিতা না করে উল্টো অনিয়মের প্রতিবাদ করে। আমরা দীর্ঘদিন যাবত চেয়ারম্যান এর অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করে আসছি এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উনি প্যানেল চেয়ারম্যান পরিবর্তন করার এমন মনগড়া হটকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে সরকারি আইনকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যে প্যানেল চেয়ারম্যান তৈরি করেছেন এতেই বুঝা যায় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রেও সরকারি কোন আইন বা বিধি অনুসরণ না করে স্বৈরচারীতার সাথে পরিষদ পরিচালনা করছেন। চেয়ারম্যান হওয়া সত্বেও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে যা হাস্যকর ও নিন্দনীয়।

ইউপি সচিব রুহুল আমিন বলছেন, এব্যাপারে কোন বিধি আছে কীনা আমার কিছুই জানা নেই। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তা করা হয়েছে।

নতুন ঘোষিত প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলছেন, বিধি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। চেয়ারম্যান ও সচিব সাহেব এবং অন্যান্য সদস্যরা আমাকে নতুন করে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আগের প্যানেল চেয়ারম্যান কোনোদিন পরিষদে আসেননি। সর্বসম্মতিক্রমে মঙ্গলবার প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু বলেছেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, নতুন করে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয়। প্যানেল চেয়ারম্যান পূর্বেরটাই বহাল থাকা স্বত্তেও কেন আবার প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করবেন ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম তা জানতে চাওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ