মুরারিচাঁদ কলেজে ৩৬শে জুলাইয়ের বিপ্লব স্মরণে ফ্যাসিবাদ বিরোধী তারুণ্য উৎসব উদযাপন।

প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫

মুরারিচাঁদ কলেজে ৩৬শে জুলাইয়ের বিপ্লব স্মরণে ফ্যাসিবাদ বিরোধী তারুণ্য উৎসব উদযাপন।

এমসি কলেজ প্রতিনিধি: মেহেদী হাসান তানিম

২০ জানুয়ারি ২০২৫: মুরারিচাঁদ কলেজে (এমসি কলেজ) আজ ২০ জানুয়ারি, সোমবার ৩৬শে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লব স্মরণে এক ফ্যাসিবাদ বিরোধী তারুণ্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক ৩৬শে জুলাইয়ের বিপ্লবের তাৎপর্য এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনা তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির বিস্তারিত ঘোষণা করা হয়েছিল। গত রোববার বিজ্ঞপ্তিটি কলেজের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়েছিল।

উক্ত নোটিশে কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও, বিভাগীয় প্রধানগণকে তাদের বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণ এবং আশেপাশে স্কাউট এবং রোভার স্কাউট সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি অনুযায়ী, সকাল ১০:০০ ঘটিকায় কলেজ পরিবারের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে । শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে কলেজের ১০ তলা একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে উক্ত সভার আয়োজন করা হয়েছে। মুরারিচাঁদ কলেজের ক্রীড়া-বিষয়ক শিক্ষিকা জেবিন আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়৷


উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন মুরারিচাঁদ কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন৷ উক্ত সভায় আহ্বায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো: আসিরুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো: রিয়াজ । উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৩৬ জুলাই বিপ্লবে চোখ হারানো মুরারিচাঁদ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরারিচাঁদ কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আকমল হোসেন এবং একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ তোফায়েল আহাম্মদ ।
জনাব শেখ মো: নজরুল ইসলামের স্মৃতিচারণমূলক স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির প্রাণসঞ্চার হয় । এরপর স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য নিয়ে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহরাব আহমেদ । তিনি সবাইকে বিচ্ছিন্নতা ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধের আহ্বান করেন।

তারপর সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মুরারিচাঁদ কলেজ শাখার আহ্বায়ক সুমিত কান্তি পিনাক, গণতান্ত্রিক ছাত্র-কাউন্সিলের মুরারিচাঁদ কলেজ শাখার সংগঠক আয়েশা আক্তার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ দর্শনবিদ্যার শিক্ষার্থী খান মোহাম্মদ সামী , মুরারিচাঁদ কলেজ শাখার ছাত্রদলের আহ্বায়ক সেলিম আহমদ সাগর, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এমসি কলেজ শাখার সভাপতি মো: ইসমাঈল খান প্রমুখ বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে তাদের মতামত ও ভাবনা তুলে ধরেছেন।

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো: আবুল কালাম আজাদ, মুরারিচাঁদ কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আকমল হোসেন,বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মো: বেলাল উদ্দিন এবং বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর পান্না বসু । বক্তব্য প্রদানকালে তরুণসমাজের প্রতি সকল জরাজীর্ণতা পরিষ্কার করে সমাজের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান প্রফেসর পান্না বসু।


প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো: রিয়াজ তার বক্তব্যে সকলের সমন্বিত ও ঐক্যবদ্ধ আওয়াজের আশা করার পাশাপাশি তারুণ্যকে সঠিক পথে পরিচালিত করার আহ্বান করেন। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তিনি মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে আহত সকল শিক্ষার্থীর লিস্ট তৈরি এবং তাদের সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেন ।
এছাড়াও উক্ত আলোচনা সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ এবং সমাজকর্মীরা ৩৬শে জুলাইয়ের বিপ্লবের প্রেক্ষাপট, তাৎপর্য এবং সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করছেন ।
সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় একই স্থানে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল । স্থানীয় শিল্পী এবং কলেজের সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল।
অনুষ্ঠান শেষে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ জানান, “আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তুলে ধরতে পেরেছি।

৩৬শে জুলাইয়ের বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে নিজেদের নিয়োজিত করবে।”
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া উৎসবমুখর পরিবেশ বেলা ০১ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ