কুলাউড়ার অবহেলিত জনপদ কলিমাবাদ

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০

কুলাউড়ার অবহেলিত জনপদ  কলিমাবাদ

মোতাহার হোসেনঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরায় যুগেযুগে সরকারী উন্নয়ন বঞ্চিত ও আলোচিত কলিমাবাদ গ্রামের রাস্তাটির সংস্কার কাজ গ্রামবাসীর নিজস্ব উদ্যোগে এগিয়ে চলেছে। বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টি বাদলকে উপেক্ষা করে কলিমাবাদ গ্রামের আবাল বৃদ্ধ ও বনিতা রাস্তাটির উন্নয়নের জন্য একযুগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ভাটেরা ইউনিয়ন বরমচাল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকা কালীন সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বহু লোক জনসেবক হওয়ার জন্য ভাটেরা ইউনিয়নের সর্বপ্রাচীন গ্রাম কলিমাবাদ গ্রামের জনসাধারণর কাছে হাজারো প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে এসে ভোট ভিক্ষা চেয়েছেন, জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার ভাষায়,  “মামা বাড়ীর মাঝি নাদের আলী বলেছিলো, বড়হও দাদা ঠাকুর ; তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব। কিন্তু ‘কেউ কথা রাখেনি’ ….।” তাতে কি? প্রায় ৮৫০ বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অন্যতম লিলা ভূমি কলিমাবাদ গ্রামের জনগন বরাবরের ন্যায় সরকারী সহযোগিতার তোয়াক্কায় বসে থাকেনি। নিজেরাই হাতে কোদাল,কাস্তে,শাবল তুলে নিয়েছে।

কলিমাবাদ গ্রামের বর্ষিয়ান মুরব্বি আওলাদ হোসেন পংকির সাথে কথা বললে তিনি জানান, “খ্রীষ্টিয় ৮ম শতাব্দিতে নবগীর্বান, গোকুল দেব,নারায়নদেব, কেশব দেব ও ঈষানদেবসহ চন্দ্রবংশীয় রাজাগণের রাজধানী ও রাজপ্রাসাদ ছিল ভাটেরার কলিমাবাদ গ্রামে। ঐ গ্রামই বিশ্বের কাছে ভাটেরাকে পরিচিতি দিয়েছে। শুধু ভাটেরার জন প্রতিনিধিরাই কলিমাবাদকে চিনেনি, কলিমাবাদ গ্রামর মানুষগুলোকে মনে রাখেনি। ১৮৭২ সালে ভাটেরার হোমের টিলায়(তৎকালীন নাম) ৮ফুট মাটির নিচে প্রাপ্ত দু’খন্ড তাম্র ফলক যা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে, তা ঐ কলিমাবাদ গ্রামেরই। এ গ্রামে বহু উচ্চ শিক্ষিত গুণীজনের জন্ম হয়েছে যাদের পরিবার থেকে কেউই কখনো জনপ্রতিনিধি হওয়ার চিন্তা করেননি। আর এ কারনেই ভাটেরায় কলিমাবাদ গ্রাম পরিকল্পিত বঞ্চনার স্বীকার”।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকারের গ্যাজেট মোতাবেক কলিমাবাদ গ্রামের একমাত্র গ্যাজেটভুক্ত রাস্তা হলো ভাটেরা বাজার হতে পশ্চিমমুখী ঘাঘরা ছড়ার পার্শ্ব ঘেষে প্রবাহিত ভাটেরা রাবার বাগানের সর্ব উত্তর সীমান্ত দিয়ে ইসলামনগর গ্রাম হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ বিআইডিসি পর্যন্ত। সরকারী তথ্য মতে এই রাস্তাটি পাকাকরনের জন্য বার বার সরকারী বরাদ্দ মঞ্জুর হলেও কলিমাবাদ গ্রামের নামে কাজ হয়েছে অন্যত্র। যা ভাটেরা ইউনিয়নের সাবেক জন প্রতিনিধিগণ ঠান্ডা মাথায় দুর্ণীতির মাধ্যমে সেটি করেছেন।

ভাটেরার কলিমাবাদ গ্রামের রাস্তার সংস্কার কাজে গ্রাম বাসীর সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও তার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। রাস্তার সংস্কারে দেশ ও প্রবাস হতে গ্রামের অনেকেই সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। কাজে অত্যন্ত পরিকল্পিত নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ঐ গ্রামেরই যুবসমাজের আস্থার প্রতিক ভাটেরা বাজার বনিক সমিতির সভাপতি হোসেন আহমদ, ভাটেরা ফ্লাওয়ার্স স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্টকালীন উপদেষ্টা মুমিন আহমদ, বিশিষ্ঠ সমাজ কর্মী আব্দুল হান্নান সিদ্দেকী ও ব্যবসায়ী রাহাত মঈন। এছাড়াও কাজে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ভাটেরা ফ্লাওয়ার্স স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক শাহরিয়ার আলম জাহাঙ্গীর, সদ্য প্রবাস ফেরত আব্দুস সামাদ আজাদ, শাহ রুমেল ও রেদোয়ান আহমদ। প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন আহমেদ রিয়াজ ও তানভির আহমদ মঈন।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কোন না কোন ভাবে রাস্তার সংস্কারে জড়িত, কিন্তু এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার হেলন মিয়া কোন ধরনের সহযোগিতা করার তো দূরের কথা, রাস্তার কাজটুকু একবারের জন্যও দেখতে আসেননি। তবে আশার কথা হলো, ভাটেরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম কাজ পরিদর্শনে এসে সকলকে উৎসাহিত করেছেন এবং ব্যক্তিগত ভাবে ৫হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। তিনি সকল কে আশ্বস্থ করেছেন, ভাটেরা বাজার হতে কলিমাবাদ গ্রামের রাস্তাটি দ্রুততম সময়ে পাকাকরণের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে।

কলিমাবাদ গ্রামের রাস্তাটির সংস্কার ও মেরামতের জন্য এ পর্যন্ত দেশে ও প্রবাস হতে যারা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাদের অন্যতম হলেন, আওলাদ হোসেন পংকি,হাজী কমরুদ্দিন,শামীম আহমদ, আখলু মিয়া, মোঃ ফটিক মিয়া,আব্দুল হান্নান সিদ্দেকী, আব্দুস সালাম সিদ্দেকী, হাসান সিদ্দেকী, শাহীন আহমদ,জামাল হোসেন,আহমেদ শিব্বির,নিসার আহমদ, আজাদ আল মামুন, মাসুদ রানা হেলাল, শেখ আকমল হোসেন,আতির আহমদ তালুকদার, তোতা মিয়া,ফুল মিয়া, রাসেল আহমদ, আবুল খায়ের, শাহিন আহমদ, রাজু.দিপু আহমেদ, হারুন মিয়া,মুরছালিন আহমদ,আবুল বাশার প্রমুখ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ