শাল্লায় দিঘালবন ও কুইশাইল ধাইর জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরন, জমিতে পানি সেচ নিয়ে কৃষকরা শংঙ্কিত

প্রকাশিত: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫

শাল্লায় দিঘালবন ও কুইশাইল ধাইর জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরন, জমিতে পানি সেচ নিয়ে কৃষকরা শংঙ্কিত

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে ছোটবড় ১৩৭টি হাওর বাওর,অসংখ্যা নদীনালা ও খাল বিল হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর এই জেলার প্রায় ২৭ লাখ মানুষের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে মাছ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে রপ্তানী করে সরকার প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। এই জেলায় প্রায় ১৪১ প্রজাতির দেশীয় সুস্বাদু মাছের জন্য নিরাপদ স্থান হলো এই হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। কিন্তু কিছু অমৎস্যজীবি ও দূর্নীতিবাজ ইজারাদারদের কারণে মৎস্য নীতিমালা আইন লংঘন করে দেশীয় তৈরী,কারেন্ট জালা,কোনা জাল দিয়ে ছোটবড় জলাশয়গুলো শুকিয়ে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চলার কারণে ইতিমধ্যে অনেক দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়,মৎস্য নীতিমালা আইনে কোন বিল সমবায় সমিতির নামে স্থানীয় জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারকে নির্ধারিত হারে রাজস্ব দিয়ে ইজারা নিতে হয়। ইজারা নেওয়ার সময় উল্লেখ থাকে কোন ইজারাদার হেমন্তের মৌসুমে বিলে মৎস্য আহরণ করবে ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু সেই আইন কি কেবল কাগজে কলমেই সীমাবন্ধ নাকি আইনের সঠিক প্রয়োগ আছে এ নিয়ে সাধারন কৃষকদের মনে চরম হতাশা ও শংঙ্কা কাজ করছে।
এদিকে জেলার শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউপির কালিটোনা গ্রুপ জলমহালের হুসেনপুর মৌজার দিঘালবন ও কুইশাইল ধাইর এই দুটি জলমহাল প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার উপরে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইজারা গ্রহন করেন শাল্লা ইউপির শ্রীহাইল গ্রামের মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ সেলিম মিয়া ও মৃত ফারুক মিয়ার ছেলে ইজাজুল ইসলাম। কিন্তু ভাসমান অবস্থায় মৎস্য আহরনের কথা থাকলে ও বিলের দু”পাড়ে পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে গত ৫ই ফেব্রæয়ারী(বুধবার) থেকে ৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত এই তিনদিনে দুটি জলাশয় শুকিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার উপরে মাছ বিক্রি করে ইজারাদারগন লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এই জলাশয়ের আশপাশে রোপনকৃত ৫০০ একর বোরো জমির মালিক ও কৃষকরা। এই ইজারাদারগণ পেশীশক্তির কারণে কোন কৃষক প্রতিবাদ করার পর্যন্ত সাহসও পাচ্ছেন না। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,ইজারাদারগণ প্রভাবশালী হওয়াতে বিলের তলা শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করার কারণে তারা তাদের রোপনকৃত জমিতে কোথা থেকে সেচ দিবেন। যদি জমিতে পানি সেচ দিতে না পারেন তাহলে তাদের ৫০০ একরের পুরো ফসলটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জলাশয়ের ইজারাদার সেলিম মিয়া,তার সহোদর ডালিম মিয়ার সাথে জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরনের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানান,কৃষকদের স্বার্থে বিল দুটি শুকানো হয়েছে বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।


এ ব্যাপারে শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোঃ জিয়া উদ্দিন বলেন এই জলাশয়গুলোর পাশে আমার এবং অন্যান্য কৃষকদের প্রচুর বোরো জমি রয়েছে। সামনে ফাল্গন মাস এখনই বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে আমরা কৃষকরা আমাদের কর্ষ্টাজিত বোরো জমিতে কিভাবে ধান ফলাব খুবই চিন্তিত। এই বিষয়টি শাল্লা মৎস্য অফিসারকে অবহিত করার পরও কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়াতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একশ্রেণীর ইজারাদাররা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ সামছুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও জীব বৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখার জলাশয়গুলোর আশপাশে কৃষকদের জমির প্রতি ও খেয়াল রাখার স্বার্থে জলাশয়গুলো যারাই ইজারা নিবেন তারা বিলের তলা শুকিয়ে মৎস আহরণ করা দন্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ বিলের তলা শুকিয়ে মৎস্য আহরন করে থাকেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিয়াস চন্দ্র দাস জানান,আমি তো নতুন যোগদান করেছি তবে মৎস্য আইনে কোন ইজারাদার জলাশয় শুকিয়ে মৎস্য আহরন করতে পারবে না। যারা করবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।