এক মায়ের চিকিৎসার জন্য, দানশীলদের সহযোগিতা কামনা

প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২০

এক মায়ের চিকিৎসার জন্য, দানশীলদের সহযোগিতা কামনা

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফেরিঘাট সংলগ্ন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে বহমান সারি নদী। সেই নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রাম কাটাখাল। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা ছোট্ট বসতভিটাটি হাফিজ বদরুল ইসলামের। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সাথে সাথেই হাজির হলাম সেই বাড়িতে। দেখা মিলল মৃত হাফিজ বদরুলের বড় ছেলে তানভিরের। চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। বিবর্ণ পোষাকে আবৃত শরীরে অভাব জিনিসটা বুঝাই যাচ্ছে।

অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া তানভির বর্তমানে বাড়িতেই অবস্থান করছে তার ছোটভাই ও ফুফুকে নিয়ে। ফুফু শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় রান্না-বান্নাসহ ঘরের যাবতীয় কাজ করছে সে নিজে। এত ছোট ছেলে ঘরের সকল কাজ করছে দেখেই চোখে পানি চলে আসলো। কিছু করার নেই পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে। কারণ, তার মা তার দাদীকে নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।

গ্রামের সব থেকে অসহায় পরিবার হয়তো সেটি। তাদের পারিবারিক অবস্থা জানলে যে কারো চোখে পানি আসতে বাধ্য।তা সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তাদের পারিবারিক চিত্র প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক ছিলো।

তার বাবা হাফিজ বদরুল ইসলাম জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে দীর্ঘদিন আশরাফুল উলুম নিজপাট মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। জাতিকে শিক্ষিতকরণের এক অদম্য বাসনা নিয়ে ছুটে চলা বদরুল ইসলামের জীবন এক ঝড়েই ওলটপালট হয়ে গেলো। বদলে গেলো জীবনের রঙ। পরিবারে নেমে আসল অমাবস্যা। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন বদরুল। একসময় তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। সময়টা ছিল আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। মৃত্যুকালে হাফিজ বদরুলের ছোট ছেলের বয়স ছিলো মাত্র ৮ মাস। তানভির তারা তিন ভাই তখন খুবই ছোট। ৪ ফুফুর স্বাভাবিকভাবে বিয়ে হলেও বিয়ের পর ফুফু একজনেরও প্যারালাইসিস হলো। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় টিকলো না স্বামীর সংসার। ফিরে আসলেন বাবার বাড়িতে। এদিকে ছেলের মৃত্যু অন্যদিকে আদরের মেয়ের অসুস্থতা সব মিলিয়ে এত শোক সইতে না পেরে স্টোক করলেন হাফিজ বদরুলের মাতা আয়েশা বেগম। ৮০ বছরের এই বৃদ্ধা মহিলার জীবনটা খুবই কষ্টের।

এক ছেলে মারা গেল, এদিকে অন্যছেলের কোন খবর নেই। বিধবা পুত্রবধূ, এতিম ৩ নাতি আর প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে মোট ৬ জনের পরিবারে নেই উপার্জনের কেউ। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা আর প্রতিবন্ধী ভাতাই তাদের পরিবারের খরচ বহনের একমাত্র পাথেয়।

স্টোক, ডায়াবেটিকসহ নানাবিদ রোগ বাসা বেঁধেছে বৃদ্ধার শরীরে। এদিকে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে বাড়ির আঙিনায় পড়ে ভেঙে ফেলেন কোমর। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের ভর্তিটাও হয়েছে করুণভাবে। কোমরের হাড্ডি ভাঙ্গার পর অভাবের তাড়ণায় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়েই চিকিৎসা চালান। অল্পকিছু ভাতার টাকা দিয়ে কি আর উন্নত চিকিৎসা করা যায়?

সর্বশেষ হাফিজ বদরুলের একান্ত বন্ধু, আরব আমিরাত প্রবাসী হাফিজ আব্দুল্লাহ বিষয়টি জানলে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেন। তার সহায়তায় ভর্তি করানো হয় ওসমানীতে।

গ্রামবাসীরকাছ থেকে জানা যায়, হাফিজ বদরুলের সহায়-সম্পত্তি বলতে যা ছিলো চিকিৎসাখরচ আর নদীর ভাঙ্গন তার সবটুকু কেড়ে নিয়েছে। হাফিজ আব্দুল্লাহর বিশেষ সহযোগিতা আর গ্রামবাসী তৈরী করে দেন কোনরকম আশ্রয় গোঁজার মতো একটি ঘর। বর্তমানে এটিই তাদের একমাত্র সম্বল। মাঝে অবশ্য জৈন্তাপুর প্রবাসী গ্রুপ থেকে একবার সহযোগিতা করা হয়, তাও দুই বছর আগে। স্কুল থেকে করানো হয় তানভিরের স্কুল ফি মাফ। তবে ৩ টি জীবন্ত প্রতিভা এখানে থেমে গেলে কি চলবে? তাদের জন্য প্রয়োজন সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। তাতে তাদের যোগ্য সঙ্গ দিতে এগিয়ে আসতে হবে সত্যিকার কোন মানবসেবীকে।

বৃদ্ধা আয়েশার চিকিৎসার খবর নিতে ওসমানী মেডিকেলে যান বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল হাই।
সেখানে গিয়ে অবলোকন করেন এক বিমর্ষ চিত্র। ডাক্তারের ব্যবস্থাপনাপত্র হাতে উপর আর নিচে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছেন হাফিজ বদরুলের স্ত্রী। ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। প্রত্যেক বাঙালি নববধূর মত তারও স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার সাজানোর। কিন্তু সেটা আর হল কই? বিয়ের পর থেকেই স্বামী অসুস্থ। ননদ ও অসুস্থ। দু’জনের সেবাকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা এ মহিলা খুব দ্রুতই হারিয়ে ফেলেন স্বামীকে। নিজের ৮ মাসের দুধের শিশুসহ ৩ সন্তানকে নিয়ে চলতে থাকে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। এরই মাঝে শাশুড়ির একের পর এক অসুস্থতা তার পথচলাকে করেছে আরো কঠিন। তবুও থেমে থাকেননি, হতাশ হননি। নিঃসংকোচে চালিয়ে যাচ্ছেন শাশুড়ি ননদ সহ পরিবারের খেদমত।

স্বভাবসুলভ লাজুকতার দরুণ উনার সাথে বেশী কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে খুব অল্পতেই অনুধাবন করা গেছে হাসপাতালের চিত্র। করোনার এ সংকটকালীন সময়ে ডাক্তার মিলানো এক মহা সমস্যা, এরই মধ্যে সরকারী হাসপাতালের গা ছাড়া ভাব তাদের ফেলেছে চরম হতাশায়। কোন পুরুষ না থাকায় ঠিকমত বুঝতে পারছেন না ডাক্তারের কথা। অথবা ডাক্তারের সাথে মিট করে নিতে পারছেন না সঠিক কোন সিদ্ধান্ত। একের পর এক টেস্ট করেই যাচ্ছেন। ডাক্তার বলছে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ অর্থের প্রয়োজন। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠতে প্রয়োজন ছিল প্রাইভেট হাসপাতালে রেফার করার। কিন্তু ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন, অর্থ? তাই তো শত কষ্টের মাঝেও অবস্থান করছেন সেখানে। নিজের পাঁচবছরের ছেলেকে ফুফুর বাড়িতে রেখে আসা বদরুলের স্ত্রী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলেন না। কথা বলতে গিয়ে যেন অসহনীয় যন্ত্রণায় গলা শুকিয়ে আসল। কথা বলবেনইবা কীভাবে? প্রতিদিন নিত্য নতুন টেস্ট। সামনে অপারেশন। সবমিলিয়ে দরকার প্রায় প্রচুর টাকা। কীভাবে ম্যানেজ করবেন এত টাকা!

প্রতিদিনের টেস্ট করানোর অর্থ মিলানো যেখানে অসম্ভব সেখানে অপারেশনের টাকা মিলানো তো অরোণ্য রোদন! তাই তো চোখদুটি অশ্রুতে জ্বলজ্বল করে ওঠলো। তার অশ্রুসজল চোখের আকুতি আমাদের ও চোখে অশ্রু নামিয়েছে। আসলে কিছু কিছু ঘটনা আমাদের জীবনকে থমকে দেয়। সিনেমাকে হার মানিয়েছে এই পরিবারের কাহিনী।

বৃদ্ধা আয়েশার উন্নত চিকিৎসা, হাফিজ বদরুলের ৩ ছেলের লেখাপড়া ও পারিবারিক খরচ নিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন দরবস্ত আল মানসুর মাদরাসার পরিচালক হাফিজ আব্দুল্লাহ ও সাংবাদিক আব্দুল হাই আল হাদী ছাড়াও সাংবাদিক মুজিবুর রহমান ডালিম ও উপজেলার বৃহত্তম সামাজিক সংগঠন বাতায়ন প্রধান পরিচালক রাসেল মাহফুজের সাথে আলোচনা করলে তারা বলেন- “আসলেই তাদের পরিবারের জার্নিটি খুবই করুণ, চরম বেদনাদায়ক। ছোটখাটো কোন অনুদান বা সাময়িক সহযোগিতা নয় বরং প্রয়োজন স্থায়ী একটা ভাবনার। এজন্য সম্মিলিত ফান্ডরাইজিং করে বৃদ্ধার উন্নত চিকিৎসা, ছেলেদের লেখাপড়ার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করা উচিত। তবে সবার আগে উচিৎ অপারেশনের টাকা ম্যানেজ করার”। আর তাই তারা এলাকার বিত্তশালী মানবসেবীদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

প্রয়োজনে যোগাযোগ ও বিকাশ করতে পারেন ০১৭৭৫৪৮৫১৫৩ এই নাম্বারে। নগদ ০১৭৫৯৬০৯৭৭০ এই নাম্বারে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ