প্রস্তুত সিলেটের পুরাতন জেল

প্রকাশিত: ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫

প্রস্তুত সিলেটের পুরাতন জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে শহরতলীর বাদাঘাটে অত্যাধুনিক কারাগার নির্মাণের পর সিলেটের পুরনো কেন্দ্রীয় কারগাারটি ছিল অবহেলা-অনাদরে। স্বল্প সংখ্যক লঘু অপরাধীদের রাখা হতো সেখানে। কারাগারের প্রায় সাড়ে ২৪ একর জায়গায় কখনো জাদুঘর, আবার কখনো সবুজ উদ্যান আবার কখনো বহুতল পার্কিং ও অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে কারাগারের মূল্যবান সরকারি জায়গা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

 

তবে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ বছরের পুরনো কারাগারটি আজ রবিবার থেকে নবযাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন (শহর) এলাকার বন্দিরাই রবিবার থেকে থাকা শুরু করেছেন এই কারাগারে। আর গ্রামের বন্দিরা থাকবেন বাদাঘাটস্থ ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে’। বন্দিদের আলাদা রাখলে শহরের অপরাধের ধরণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম ছড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কারাগার সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রাচীন কারাগারগুলোর মধ্যে সিলেট কারাগার অন্যতম। ১৭৮৯ সালে আসামের কালেক্টরেট জন উইলিয়াম প্রায় এক লাখ রুপি ব্যয়ে সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধোপাদীঘিরপাড়ে ১২১০ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারটি নির্মাণ করেন। প্রশাসনিক প্রয়োজন ও বন্দী আধিক্যের কারণে ১৯৯৭ সালে এটিকে জেলা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হয়।

২০১৯ সালে বাদাঘাট এলাকায় অত্যাধুনিক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর শহরের অভ্যন্তরে পুরনো কারাগারের মূল্যবান ভূমির উপর চোখ পড়ে অনেকের। বিভিন্ন সময় ‘সবুজ উদ্যান’, ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’, ‘বঙ্গবন্ধু যাদুঘর’ ও অত্যাধুনিক বহুতল পার্কিং ও বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা অন্য কোন কাজে ব্যবহারে ছাড় না দেওয়ায় সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

তবে বাদাঘাটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২’। আদালত থেকে লঘু অপরাধীদের এনে রাখা হতো এই কারাগারে। ১২শ’ ধারণ ক্ষমতার কারাগারে থাকতেন ৫০-১০০ জন বন্দি।

কারাগার সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গত ১৮ ডিসেম্বর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে ফের নির্দেশনা আসলে ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ছগির মিয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ মেট্রোপলিটনের বন্দিদের স্থানান্তরের জন্য সিনিয়র জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মো. ছগির মিয়া জানান, আইন অনুযায়ী জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিরা আলাদা থাকবেন। কিন্তু এতোদিন সকল বন্দিদের বাদাঘাটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে একসাথে রাখা হতো। তিনি বলেন, শহর ও গ্রামের বন্দিদের অপরাধের ধরণ আলাদা। শহরে অনেক দাগি অপরাধী থাকেন।

অন্যদিকে গ্রামের বন্দিদের অপরাধ থাকে তুলনামুলক লঘু। তাই উভয় অঞ্চলের অপরাধীদের একসাথে রাখলে বড় অপরাধ প্রত্যন্ত এলাকায়ও ছড়ায়। এখন থেকে শহরের অপরাধীদের ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২’-এ রাখা হবে। এতে শহরের অপরাধ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম ছড়াবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV