শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশে চলে গণহ*ত্যা

প্রকাশিত: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশে চলে গণহ*ত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট:

কোটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দমনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নির্দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় রাজনৈতিক নেতারা নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর ওএইচসিএইচআরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে ১৯ জুলাই এক বৈঠকে বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য সরাসরি নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে তিনি বিক্ষোভ পরিচালনাকারী নেতা ও ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’দের গ্রেপ্তার ও হত্যা করে লাশ গুম করার নির্দেশ দেন। অন্য এক বৈঠকে জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য সহিংস পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন।

এতে আরো বলা হয়, ছাত্রনেতাদের ডিবি ও ডিজিএফআইয়ের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গোপন করার এক পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলন প্রত্যাহারে বন্দি ছাত্রনেতাদের ভিডিও বক্তব্যের পর সৃষ্ট জনসংযোগ বিপর্যয়ের পর ২৯ জুলাই মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ডিবি প্রধানকে প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ আগস্ট সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। ওই দিনই নিজের বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠক করেন তিনি। দুই বৈঠকেই পরদিন বিক্ষোভকারীদের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি শক্তির জোরে দমন করার পরিকল্পনা করা হয়। এর জেরে পুলিশ এবং অন্তত একটি ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যা করে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় রাজনৈতিক নেতারা সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৮ জুলাই অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে মোতায়েন করে বিক্ষোভকারীদের দমনে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া অন্য বৈঠকে বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মুক্ত করার নির্দেশ দেন তিনি।

এতে জানানো হয়, বিক্ষোভ দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিজেই পর্যবেক্ষণ করতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনীগুলো ও গোয়েন্দা বিভাগগুলোর প্রধানদের সমন্বয়ে এক অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০ জুলাই থেকে সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিও এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করে আসছেন। বিক্ষোভ দমনের তৎপরতায় প্রতিদিনই এ কমিটির বৈঠক বসত এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করতেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেত। ২১ জুলাইয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাত্রাতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে।

এতে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতারা ব্যক্তিগতভাবেও সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়েছেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণে ২০ বা ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ী গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা কীভাবে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার বর্ণনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবশ্য কোনো কোনো সাবেক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাত্রাতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার বন্ধের জন্য বলেছেন। তবে জাতিসংঘের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV