ওসির সহযোগিতায় জলমহালে ১৫ লাখ টাকার মাছ লুটে নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৫

ওসির সহযোগিতায় জলমহালে ১৫ লাখ টাকার মাছ লুটে নেয়ার অভিযোগ

এবার থানার ওসির সহযোগিতায় জলমহালের ১৫ লাখ টাকার মাছ লুটে নেয়ার অভিযোগ করলেন এক ভোক্তভোগী।
অভিযুক্ত ওসির নাম মো. সজীব রহমান। তিনি সুনামগঞ্জের হাওর সীমান্ত জনপদ খ্যাত মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।
ভোক্তভোগী অভিযোগকারির নাম সাইদুর রহমান। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের প্রয়াত হাছন আলীর ছেলে।
বুধবার (৫ মার্চ) জলমহালের মাছ লুটের ঘটনায় থানার ওসি, এসআই সহ ১৭ জনের নামে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ববারর পৃথক ভাবে দুটি লিখিত অভিযোগ করেন সাইদুর রহমান।
সুনামগঞ্জ জেলা ও পুলিশ সুপারের নিকট দেয়া অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি মধ্যনগর থানার ওসির লালিত দুগনই গ্রামের ১২ থেকে ১৪ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গোড়াডুবা জলমহাল দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইদুর রহমানের নিকট ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
ওই চাঁদা দাবির বিষয়টি প্রথমে মধ্যনগর থানার ওসিকে জানানোর পর কাযত কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে নিরুৎসাহিত করেন ভোক্তভোগী সাইদুর রহমানকে।
ভোক্তভোগী পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ করলে তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। ডিবির ওসি তদন্তের নামে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন।
গেল ১১ ফেব্রুয়ারি একই চক্রের ওসির লালিত ২৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে জলমহালের খলায় এসে থানার এসআই আসাদকে সাথে করে নিয়ে এসে ফের চাঁদাদাবি করে ২০ হাজার টাকা মুল্যের আসবাবপত্র জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এসময় থানার এসআই আসাদ জলমহালে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।
এর পরদিন (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমান সাইদুরকে থানায় ডেকে নিয়ে ওসির কক্ষে বসিয়ে রেখে হুমকি ধামকি দিয়ে মধ্যনগরের বিএনপি নেতা কামাউড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাসারের নিকট গোড়াডুবা জলমহালটি বিক্রির জন্য প্রস্তাব, নানামুখী চাঁপ সৃষ্টি করেন। ওই সময় ওসির কক্ষে বিএনপি নেতা আবুল বাসার উপস্থিত ছিলেন। ওসির ওই প্রস্তাবে সাইদুর রাজি না হওয়ায় ওসি অশালীন ভাষায় সাইদুরকে গালিগালাজ করে হুমকি ধামকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
ওসির প্রস্তাবে জলমহাল বিক্রিতে রাজী না হওয়ায় ওসির পরোক্ষ- প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মধ্যনগরের জমশেরপুর গ্রাম সংলগ্ন গোড়াডুবা জলমহালের অভয়াশ্রমের ভেতর গেল ৩ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় বিএনপি নেতা বাসারের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জলমহালের খলায় থাকা টিভি, সোলার প্যানেল, ট্রলারে থাকা ইঞ্জিন চালিত কয়েকটি শ্যালো মেশিন সহ ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নেয়। ওই রাতে তিনটি সেচ মেশিনে জলমহালের পানি সেচে থানার ওসি সজীব রহমান, এসআই আসাদের সহযোগিতায় বিএনপি নেতা আবুল বাসার চক্র জলমহাল থেকে বীরদর্পে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ লুটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন ভোক্তভোগী সাইদুর রহমান।
বুধবার রাতে সাইদুর রহমান আরো জানান, মধ্যনগরের গোড়াডুবা জলমহালের যে অংশ থেকে মাছ লুটে নেয়া হয়েছে সেটি ৬ বছরের জন্য বৈধ ভাবে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে। ওসির প্রস্তাবে জলমহাল বিক্রি না করায় মধ্যনগর থানার ওসি এবং এসআই’র লালিত উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল বাসারের নেতৃত্বে জলমহালের ১৫ লাখ টাকার মাছ সহ দেড় লাখ অধিক মুল্যের আসবাবপত্র লুটে নেয়া হলেও থানার ওসি সহ থানা পুলিশ ছিলেন নিরব দর্শক।
মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আবুল বাসারের নিকট জলমহাল লুটের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জলমহাল লুটের বিষয়ে বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিক্তিহীন।
অভিযোগের বিষয়ে বুধবার মধ্যনগর থানার এসআই আসাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ থাকায় ওসি স্যারের নির্দেশে থানার ফোর্স নিয়ে আমি ওই জলমহালে ( গোড়াডুবা) যাই, আমার চাকুরি প্রায় শেষ সময়, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমান বলেন, আমি কাউকে জলমহাল ( বিল) বিক্রি করতে চাঁপ সৃষ্টি করিনি, আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার(দায়িত্বপ্রাপ্ত)) তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, মধ্যনগরের গোড়াডুবা জলমহাল লুটে নেয়ার অভিযোগে পেয়েছি। থানার ওসি সহ পুলিশের কোন সদস্য জলমহালে লুটেরাদের সহযোগিতা করে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন হবে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV