সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়নকে শিবির ট্যাগে গু*লি, ৪ পুলিশের বিরু*দ্ধে মা*মলা

প্রকাশিত: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৫

সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়নকে শিবির ট্যাগে গু*লি, ৪ পুলিশের বিরু*দ্ধে মা*মলা

ডেস্ক রিপোর্ট:

শিবির ট্যাগে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়ন বাছার। গত মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুবের আদালতে চার পুলিশ সদস্যের নামে এ মামলা করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে বুধবার আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে সূত্রাপুর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন— সূত্রাপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. আমানুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ও এরশাদ হোসেন এবং কনস্টেবল কামাল হোসেন। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।

এক দশক আগে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। ওই কর্মসূচিতে যোগ দিতে রওনা হলে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার এলাকায় থেকে ছাত্রদলের কর্মী নয়ন বাছারকে ধরে আনে অভিযুক্ত চার পুলিশ। এ সময় শিবির ট্যাগ দিয়ে গুলি করতে গেলে নিজেকে ছাত্রদলের কর্মী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে পরিচয় দিলেও পুলিশকে দমনো যায়নি। শটগানের জোড়া গুলিতে পঙ্গু করে দেওয়া হয় নয়ন বাছারকে। সেদিন নয়নকে গুলি করেই নিস্তার দেয়নি পুলিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে।

মামলায় নয়নের অভিযোগ, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে ডাকা অবরোধের সমর্থনে মিছিলে যোগ দিতে রওনা হন নয়ন বাছার। পথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা থেকে অভিযুক্ত চার আসামিসহ ৪০ থেকে ৪৫ জন নয়নকে ধরে আনেন। শাঁখারীবাজার মোড়ে বাসে আগুন লাগানোর অভিযোগ এনে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সূত্রাপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. আমানুল্লাহ। নয়ন চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামি এসআই রফিকুল ও এসআই এরশাদ হোসেন বাদীকে ধরে রাখেন। পরে এসআই আমানুল্লাহ অপর আসামি কনস্টেবল কামালকে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগানোর হুকুম দিলে তাক হ্যান্ডকাপ পরানো হয়। তখন এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদ বলেন, তুই শিবির, তুই গাড়িতে আগুন দিয়েছিস। জবাবে বাদী বলেন, আমি হিন্দু আমি শিবির না।

এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদের নির্দেশে নয়নকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার বাম পায়ের হাঁটুর উপরের অংশে দুই রাউন্ড গুলি করে কনস্টেবল কামাল হোসেন। এরপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গাড়িতে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ঘুরতে থাকেন তারা। এ সময়ে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে তারা গুলিবিদ্ধ নয়নকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

মামলায় বাদী আরও অভিযোগ করেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর এসআই রফিকুল ও এরশাদ নয়নকে বলেন, তুই আগুন সন্ত্রাস করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিস এই মর্মে বিবৃতি দে। নইলে চিকিৎসা ছাড়াই তুই মারা যাবি। গুলি করার একদিন পর তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ওই বছরের ১৭ মে জামিন মেলে নয়ন বাছারের। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মামলার আসামি এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদ নয়নকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে যদি কোনো মামলা করিস, তাহলে তোকে জানে মেরে ফেলব।

জানা গেছে, মামলার বাদী নয়ন বাছার বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের প্রভাষ বাছারের ছেলে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়ার সময় ছিলেন ছাত্রদলের কর্মী, পরবর্তী সময়ে হন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক।

সুত্র-আমারদেশ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV