” আধ্যাত্নিক রাজধানী সিলেট একখণ্ড পূণ্যভূমি”

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৫

” আধ্যাত্নিক রাজধানী সিলেট একখণ্ড পূণ্যভূমি”

মুজিবুর রহমান ডালিমঃ আধ্যাত্নিক নগরী সিলেট মহানগরী। পূণ্যভূমি সিলেটে পবিত্র রমজান মাসে ঘ্রাণ মিলে পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদীনা নগরীর মতো। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় খুব যত্নশীল সিলেটের মানুষ। নগরীর মসজিদে মসজিদে ইবাদতে মসগুল থাকেন মুসল্লীরা।ইসলামের দাওয়াত আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে প্রাচীন শ্রীহট্রে আগমন ঘটে দরবেশ ও আউলিয়া হযরত শাহজালাল ( র:) এর। এই দরবেশের সাথে আসেন হযরত শাহপরান( র:) সহ ৩৬০ আউলিয়া। মূলত আদি সিলেটের গৌড় রাজ্যের সিংহাসনে অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দ কে আধ্যাত্নিক কায়দায় পরাজিত করে তার রাজ সিংহাসনে ইসলামের পতাকা উড়ান ইসলামের এই মহা দরবেশ শাহজালাল আউলিয়া। আধ্যাত্নিক সিলেট শুরু হয় সারা বাংলায় ইসলামের প্রচার। আর আধ্যাত্নিক আজকের এই সিলেট মহানগরীতে রয়েছে শত শত মসজিদ ও আউলিয়াদের মাজার। অনেক মসজিদের পাশেই শায়িত আছেন হযরত শাহজালাল( র:) সহ ইসলামের প্রচারক আউলিয়ারা। দরগায়ে হযরত শাহজালাল মসজিদ,হযরত শাহপরাণ মসজিদ, আদি মুসলমান বুরহান উদ্দিন জামে মসজিদ, নাইয়রপুল জামে মসজিদ, শাহ আবু তুরাব জামে মসজিদ, বন্দর বাজার জামে মসজিদ, শাহী ঈদগাহ শাহ মিরাজী মাজার জামে মসজিদ, আম্বরখানা জামে মসজিদে মুসল্লীরা তারাবীর নামাজ পর জড়ো হতে থাকেন ইবাদত বন্দগী ও জিকির আজগারের জন্য। পরহেজগার মুসল্লীরা খতম করে তাহাজ্জুদ আদায় করেন। রাতের এই রজনীগুলোর পবিত্রতা যে কাইকে আকৃষ্ট করে ইসলামের পথে, হেদায়াতের পথে। জুময়ার নামাজের মতো জড়ো হন রোজাদার মুসল্লীরা মসজিদে মসজিদে এমন ইবাদত পবিত্র নগরী মক্কা ও মদীনায় দেখা যায়। তারাবির পর নসিহত পেশ করেন সিলেটের বুজুর্গরা। সিলেটের পীর ও বুজুর্গ শায়খে বরুনা, ইদ্রিস লক্ষীপূরীর মতো শায়খদের নসীহত শুনেন ইবাদতপিপাসু মুসল্লীরা। বিশেষ করে নাইয়রপুল মসজিদে রাত ১ টায় শুরু হয় তাহাজ্জুদের নামাজ। শেষ হয় ৩ টায়। নামাজের পর মকবুল দোয়া আর জিকির আজগারে নাইয়রপুল মসজিদে শুনা যায় আল্লাহনও রাসুল প্রেমিকদের কান্নার রুল ও আহাজারী।

শেষ দশ দিন প্রতি বছর নগরীর প্রতিটি মসজিদে শুরু হয় তাহাজ্জুদ ও এতেকাফ। দরগায়ে হযয়রত শাহজালাল (র:) মসজিদ, নয়াসড়ক জামে মসজিদ, বন্দর শাহ আবু তূরাব জামে মসজিদ ও নাইয়রপুল জামে মসজিদে এতেকাফ ও তাহাজ্জুদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন শহরতলীর মুসল্লীরা। মসজিদ কমিটি মেহমান ও এতেকাফ গুজারীদের খেজমত করে থাকেন। শেষ দশ দিনে মসজিদের আশ পাশ এলাকা তথা পূরো মহানগরীতে পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়ে।

নাইয়রপুল মসজিদে রাত ৩ টায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে চোখ মুছতে মুছতে বের হচ্ছেন মুসল্লীরা। গতকাল গভীর রজনীতে কথা হয় এক মুসল্লীর সাথে। তিনি জানান আল্লাহর নৈকট্য লাভ আর মাফি পেতে নিরবে প্রতিদিন আসি। নামাজ পড়ে ইমাম ও খতিব নাজিম উদ্দিন কাসেমী সাহেব দোয়ায় অংশ নেই। আমার মনে হয় যেনো আল্লাহ আমার ফরিয়াদ শুনছেন।আশা করি ক্ষমা করবেন। নয়াসড়ক মসজিদে প্রতিবছর আগমন করেন আওলাদে রাসুল( স:) আরশাদ মদনী( র:)। তিনি তাহাজ্জুদের জামাত পড়ান।সেখানে নামাজ পড়তে আসেন সমগ্র সিলেট বিভাগ থেকে মোসল্লিরা। এই নয়াসড়ক পয়েন্ট এখন মাদানি চত্বর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ইবাদত পিপাসুদের অনেকে এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে ছুটে যান একটু প্রসান্তি আর আল্লাহর ওলিদের পিছনে নামাজ আদায় করার জন্য। তাহাজ্জুদে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আশায় পরেহজগার সাদাসিদে সাধারণ মানুষদের অংশ গ্রহণ লক্ষ্মণীয়। নগরীর শাহ আবু তুরাব মসজিদ ও সারারাত ইবাদতের একটি কেন্দ্র। সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ (র:) হরিপুরীর সাহেবজাদা মাওলানা হেলাল আহমদ ও শায়খুল হাদীস আব্দুল কাদির বাগরখালি নসীহত পেশ করেন। তাহাজ্জুদের নামাজে ইমামমতি করেন মসজিদের ইমাম সাহেব। ঐ মসজিদে ব্যবসায়ীদের সাথে সাধারণ মুসল্লীরা নামাজ আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করেন।অনেক মুসল্লী জানান আধ্যাত্নীক সিলেটের এই আমলের প্রথা বাপ দাদার মূখে শুনে এসেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই একমাত্র প্রত্যাশা আগত মুসল্লীদের। শেষ দশ দিনে সকলকে আমলের সহিত থাকতে পরামর্শ দেন তাঁরা।

সিলেটের বুজুর্গরা শুধু নগরী নয় বিভিন্ন উপজেলায় ও পরহেজগার মুসল্লী তৈরীর জন্য চষে বেড়াচ্ছেন। মুফতী রশিদুর রহমান ফারুক বরুনার শায়েখ গোলাপগন্জ থানার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার এক মসজিদে আটশত মুসল্লীসহ এতেকাফ শুরু করেছেন। কানাইঘাট দারুল হাদিস ও এদারায়ে কওমি বোর্ডের শায়খুল হাদীস আল্লামা ইদ্রিস লক্ষীপুুরী নিজ উপজেলার মসজিদে শত শত মুসল্লীসহ এতেকাফ করছেন। উপ মহাদেশের কিংবদন্তি ও ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা ফারিগ এই শায়খরা সিলেটবাসীর মাতার তাজ। তাদের জীবন আদর্শ রাসুল(স;) এর সুন্নতী কায়দায় গঠিত। বৃহত্তর সিলেটের কোটি মানুষের আপনজন বুজুর্গরা পবিত্র রমজানের ফজিলত ও করনীয় সম্পর্কে সিলেট বাসীকে নসীহত করে আসছেন। সিলেট আদি মুসলমান গাজী বুরহান উদ্দিন মাদ্রাসা ও মসজিদে সারা বছর ইবাদত পিপাসুদের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। শায়খ নাসিম উদ্দিন কাসেমুল উলুম শাহজালাল (র:) দরগাহ মাদ্রাসার প্রথম বেচের বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন। সিলেটের ওলি ও বুজুর্গ মাওলানা আকবর আলী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন গাজী বুরহান উদ্দিন দারুল হাদিস মাদ্রাসা। পরহেজগার মুসলমান গাজী বুরহান উদ্দিনের সন্তান শহীদ হন অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দের হাতে।পিতা কতৃক আকিকা করা( গরু জবাইর) অপরাধে শিশু নাসিম উদ্দিন কে হত্যা করে পাষান গৌড় গোবিন্দ। আর পূত্র হত্যার প্রতিবাদে গাজী বুরহান উদ্দিন দিল্লির সুলতানের কাছে বিচার প্রার্থী হলে সিলেট আগমন ঘটে দরবেশ শাহজালাল( র:) ওলির। আর এই মাদ্রাসা নামকরণ করে গাজী বুরহান উদ্দিনের স্মৃতি অম্লান করেন পীর ও বুজুর্গ মাওলানা আকবর আলী সাহেব। পবিত্র রমজানে এই মসজিদ ও মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত রাতভর আমলে শরীক হন শতশত মুসল্লী।

নগরীর বন্দর বাজার জামে মসজিদে প্রতিবছর ১৫ রমজান থেকে ১৯ রমজান নসিহত পেশ করেন সিলেটের ওলি খ্যাত বুজুর্গ রশিদুর রহমান ফারুক শায়খে বরুনা ও এই যুগের বাতিলের আতংক খ্যাত বুজুর্গ শায়খ নুরুল ইসলাম ওলিপুরী। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র বন্দর বাজার মসজিদ মসজিদের কানায় কানায় মুসল্লীরা বয়ান শুনে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। পবিত্র রমজানে শেখঘাট মসজিদ, কদমতলী মসজিদের দৃশ্য প্রায় একই রকম। ঐতিহ্যবাহী খোজারখলা তাবলীগ জামায়াতের মারকাজ মসজিদে আসেন সমগ্র দেশের তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা। প্রতি বৃহস্পতিবার এশার নামাজ আদায় করে নছীহত শুনেন দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লীরা। পবিত্র রমজানে ইবাদত জিকির আজগার আর দিনের দাওয়াত শুনে আকৃষ্ট হয়ে শত শত লোক চিল্লার সাথীর জন্য দিনের দাওয়াতে বের হন। পূরো সিলেট জুড়ে রমজানের রজনী কাটে জান্নাতের আশায়। ওলিদের পিছনে নামাজ আদায় আর নসীহত শুনে হাজার হাজার মুসলিম ভাইয়েরা জীবনে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিজেদের স্বপেছেন। দরগায়ে হযরত শাহজালাল (র 🙂 মাজার জিয়ারত আর হাজার হাজার মুসল্লিদের সাথে একত্রে মসজিদে নামাজ ও নফল ইবাদতের জন্য ৬৪ জেলার মানুষ ছুটে আসেন। স্বচক্ষে দরগাহর এলাহীকান্ড ও পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হন আগত মুসল্লীরা। বিশেষ করে তারাবির নামাজ ও তাহাজ্জুদের নামাজ ধীর ও স্থীর ভাবে পড়তে এখানে পরহেজগার মুসল্লীরা আসেন। মনজুরানো তেলাওয়াত সকলকে আকৃষ্ট করে। আর ইসলামের প্রচারক ৩৬০ আউলিয়ার প্রধান হযরত শাহজালাল( র 🙂 মাজার, সিলেটের অলি প্রয়াত মাওলানা আকবর আলী সাহেব ও সদ্য প্রয়াত দরগাহ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুহিবুল হক গাছবাড়ী হুজুরের কবর জিয়ারত করেন আগত মুসল্লীরা।খোদা ভিরু তরুন প্রজন্ম তৈরী করতে সিলেটের বুজুর্গ ও অলিদের এই ত্যাগ যুগ যুগ থেকে সিলেটবাসী কদর করে আসছে।রমজানের পবিত্র মহিমায় আধ্যাত্নিক সিলেট যেনো সত্যিই একখন্ড পূণ্যভূমি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV