জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি , ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত

প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০

জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি , ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত

মোঃ হুমায়ূন কবীর ফরীদিঃ জগন্নাথপুর থেকে
জগন্নাথপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বাড়ছে যত ভোগান্তি। ধ্বসে পড়ছে কাঁচা ঘর-বাড়ী। নষ্ট হয়েছে রাস্তা -ঘাট। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ চলছে।

থেমে থেমে প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলে দ্বিতীয় দফায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা,নলজুর,রত্না ও ডাউকা নদী সহ বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওর এর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড় ফেচিবাজার,রানীগঞ্জ,চিলাউড়া বাজার সহ জগন্নাথপুর উপজেলা সদর বাজার এর মাছ বাজার ও বিভিন্ন বাসাবাড়ি সহ উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের নাদামপুর,হিজলা,বালিকান্দী,কান্দারগাঁও,নোয়াগাঁও, সাদিপুর,কামারখাঁল,জগদীশপুর,কাদিপুর,পাড়ারগাঁও, মোল্লারগাঁও,খাশিলা সুনাওয়াখাই, যোগলনগর, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালী,বালিকান্দী, দাসনাগাঁও,হরিনাকান্দি,সমধল,বেতাউকা,গাদিয়ালা, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল,বাঘময়না,আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেচি,মিলিত,মিঠাভরাং,কালাম্বরপুর, ঐয়ারকোণা,ধাওরাই,আটঘর,পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া,ফেচি,কসবা,রমাপতিপুর,মশাজান,জগন্নাথপুর পৌর এলাকার আলখানাপার,হবিবনগর,ভবানীপুর ও পূর্ব ভবানীপুর সহ প্রায় ৪৫ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েন। তলিয়ে যায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট এবং মৎস্য খামার। অনেকেই উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে ও বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকাযোগে মানুষ যাতায়াত করছেন। আজ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত ১৬ ই জুলাই রোজ বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উপজেলার এই সকল এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। কাঁচা বাড়ীর ঘরের বেড়া(বাঁশ-আড়ার বেড়া) ধ্বসে পড়ছে। সহায়-সম্বলহীন জনগণ তথা বন্যা কবলিত জনসাধারণ নতুন ভোগান্তির শিকার হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদর সহ জেলা ও বিভাগীয় শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কগুলো বানের স্রোতে ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন কিংবা পায়ে হেটে যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ। এছাড়াও অন্য সংস্থানেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কিছু মানুষ সরকারি কিংবা বেসরকারি সংগঠন এমনকি ব্যাক্তি উদ্যেগে বিতরণকৃত ত্রাণসামগ্রী পেলেও এখনো এক তৃতীয়াংশ মানুষের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ত্রাণ সামগ্রী। যদিও সরকারি ও বেসরকারি এমনকি ব্যাক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
আকস্মিক বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়া একাধিক ব্যক্তি ভারাক্রান্ত মনে বলেন, আকস্মিক বন্যার পানিতে বাড়ী-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছি। করতে পারছিনা কাজ-কর্ম। পাচ্ছিনা কোনোরকম সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। প্রায় ১৫ দিন ধরে আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। পানি কমার সাথে সাথে ঘরের বেড়া ধ্বসে পড়ছে। কিভাবে যে কি করি ভেবে কুল পাচ্ছিনা। এমতাবস্থায় চাই সরকারি সহযোগিতা। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ত্রান পাওয়ার যোগ্য জনসাধারণ কোনোরকম ত্রান বিশেষ করে সরকারি সহয়তা পাচ্ছেন না। জন-প্রতিনিধিদের পছন্দের লোকজন এর ঘর-বাড়ীতে পানি না উঠার পরও ত্রাণ পাচ্ছেন।উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পানি বন্দী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে বন্যা দুর্গতদের তালিকা করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল আলম মাসুম জানান, দুর্গত এলাকার খোঁজ খবর নিচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সরকারি সহায়তা দ্রুততার সাথে বন্যা কবলিতদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যাহারা বন্যা কবলিত হয়েও ত্রাণ পাননি তারা সরাসরি উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বন্যা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সামগ্রী পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান মহোদয়ের দিক নির্দেশনা মোতাবেক বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ