লাখো মিশরীয় মানুষের রক্ত এবং নানা সংঘাতের সাক্ষী সুয়েজ খাল

প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২০

লাখো মিশরীয় মানুষের রক্ত এবং নানা সংঘাতের সাক্ষী সুয়েজ খাল

দিনরাত সংবাদঃঃ মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তি এবং সংঘাতের প্রসঙ্গ উঠলেই সুয়েজ খালের নাম অবধারিতভাবে চলে আসে। লাখো মিশরীয় মানুষের রক্ত এবং নানা সংঘাতের সাক্ষী সুয়েজ খাল বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতি, দু’টোই একত্রে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বহুকাল ধরে। ১৯৫৬ সালের মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দেল নাসের সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন এবং সুয়েজ খালকে মিশরের জাতীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে খ্যাত এই সুয়েজ খাল প্রতিষ্ঠার দেড়শ বছর পূর্তি পালন করা হয়।

ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে সুয়েজ খাল খনন শুরু করা হয়। এটি মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত একটি কৃত্তিম সামুদ্রিক খাল। উত্তর আটলান্টিক থেকে ভারত সাগরে প্রবেশের সরাসরি পথ হিসেবে এই খাল বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। খালটি খননের দায়িত্বে ছিলো একটি ফরাসি কোম্পানি এবং খননে অংশ নিয়ে লাখ লাখ মিশরীয় শ্রমিক। সুয়েজ খাল খননের মুল উদ্যোক্তা ছিলেন ফরাসি প্রকৌশলী ফারদিনান্দ দি লেসেন্স। ১৮৫৯ এর এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া খনন কাজ শেষ হয় ১৮৬৯ এর নভেম্বর মাসে এবং এরপর এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের যৌথ একটি সংগঠন ‘সুয়েজ ক্যানাল অথরিটি’ এই খালের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সুয়েজ খালের ব্যাপক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দেল নাসের ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন। এর ফলে মিশরের সাথে বাকি দেশের অর্থনৈতিক সংঘাত শুরু হয়। এই সংঘাতের ফলে ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুয়েজ খাল বন্ধ রাখা হয়। এছারাও আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধের পর ১৯৬৭-১৯৭৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর বন্ধ ছিল এই সুয়েজ খাল।

সুয়েজ খাল তৈরির পূর্বে ভূমধ্যসাগরে কোনো জাহাজকে ইউরোপ থেকে দক্ষিণ এশিয়া আসতে হলে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসতে হতো। ফলে পৃথিবীর বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলোকে জ্বালানি তেল বাবদ গুনতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা। এ খালের কারণে ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে সমুদ্রপথের দূরত্ব কমে গেছে যাওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের ৫ ভাগ আসে এই সুয়েজ খাল থেকে। বর্তমানে প্রায় ৫০টি আন্তর্জাতিক জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে অতিক্রম করে এবং প্রায় প্রতিবছর এই খাল দিয়ে প্রায় তিনশ মিলিয়ন পণ্যের বাণিজ্য হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ