বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর ছায়া ফেলেছে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব

প্রকাশিত: ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর ছায়া ফেলেছে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব

২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
বাংলাদেশের সাথে এককালের সুসম্পর্ককে সুসংহত করার জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রচেষ্টা জোরদার করেছে ভারত। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা ঘোলাটে হয়ে পড়ার কারণে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের দরজা খুলতে শুরু করেছে।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলির দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। তবে এ পর্যন্ত মাত্র তিনজন মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পেরেছেন তিনি। চার মাস ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিদায়ী সাক্ষাতের চেষ্টা করে আসছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে সফল হননি তিনি।

ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের সিলেট জেলায় বিমানবন্দরের একটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এপ্রিল মাসে ভারতকে পরাজিত করে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের কাজ পেয়েছে চীনের বেইজিং কন্সট্রাকশান গ্রুপ। এই চুক্তি নয়াদিল্লীতে সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছে বলে জানা গেছে।

জুন মাসে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বড় অগ্রগতি হয়, যে সব বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যের জন্য নিজেদের বাজার খুলে দেয় চীন। সব মিলিয়ে ৮,০০০ বাংলাদেশী পণ্য এখন সেখানে যেতে পারবে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে দিল্লীতে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ঢাকা এটাকে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’ আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ার কারণে ভারতের সাথে বহু পুরনো সম্পর্কের উপর এর কালো ছায়া পড়েছে।

তিস্তা নদীতে পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্যেও চীনের দিকে ফিরেছে বাংলাদেশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ জন্য চীনের কাছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের অব্যাহত বিরোধীতার কারণে আট বছর ধরে এই নদীর পানি চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো আলী রিয়াজ নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে বলেন, “বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক বেড়ে যাওয়ায় ভারতের অস্বস্তি সৃষ্টির বিষয়টি স্বাভাবিক”। তিনি অনুমান করেন যে, বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়তে থাকায় ভারতের প্রভাব এখানে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, যেটা এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

রিয়াজ ঢাকাকে সতর্ক করে দেন যাতে ঢাকা দুই আঞ্চলিক শক্তির প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত না হয়।

ভারতের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো গত বছর ভারতের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট পাস। এই আইনের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদেরকে দ্রুত নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান করা হয়েছে। এই আইনকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন হাসিনা। এমন সময় এই আইন করা হয়, যখন আসামে নাগরিকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই আইন তৈরির ফলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে মুসলিম অভিবাসীদের বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঢাকা দুটো পদক্ষেপকেই জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং বেশ কিছু মন্ত্রীর ভারত সফরকেও বাতিল করে।

Source নিক্কি এশিয়ান রিভিউ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ