সিলেট ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২০
দিনরাত সংবাদ::
চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল সিনোভ্যাকের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার নীতিগত অনুমতি দেয়ার প্রায় দেড় মাস পর পরীক্ষা বাস্তবায়নের অনুমতি মিলল। সিনোভ্যাকই প্রথম কোম্পানি যারা বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা পরীক্ষার অনুমতি পেল।
এদিকে গত ১৯ আগস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধণ শ্রিংলার ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তাঁকে প্রস্তাব দেন যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা যে টিকার পরীক্ষা ভারতে চলছে, বাংলাদেশে সেই টিকার পরীক্ষা হতে পারে।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস টিকার পরীক্ষা বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার অংশীদার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআরবি)।
চার হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ১৮ মাস ব্যাপী এই টিকার পরীক্ষা চলবে বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান আইসিডিডিআর,বি’র মুখপাত্র তারিফুল ইসলাম খান।
তবে কবে নাগাদ এই পরীক্ষা শুরু হবে সেব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।
‘ভ্যাকসিন আসতে হলে ট্রায়াল লাগবে’
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেই বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
“আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রায়াল করতে দেবো। যারা স্বেচ্ছায় আসবে তাদের উপরই শুধু ট্রায়াল হবে,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এখন পর্যন্ত চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “আলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।”
“আমরা যেহেতু চাই দেশে ভ্যাকসিন আসুক, তাহলে তার তো ট্রায়াল লাগবেই,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, প্রস্তাবনা অনুযায়ী সিনোভ্যাকের টিকার পরীক্ষাটি ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা হবে।
প্রায় চার মাস আগে আইসিডিডিআরবি’র মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকাটির পরীক্ষার অনুমতি চায় সিনোভ্যাক। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ওই পরীক্ষার নীতিগত অনুমতি দেয়।
গত জুলাইর শেষ দিকে পরীক্ষার চূড়ান্ত অনুমতির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠায় বিএমআরসি।
এরই মধ্যে গত ১৮ আগস্ট অনেকটা আকস্মিককভাবে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধণ শ্রিংলা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সাথে সাক্ষাতের পর হর্ষবর্ধণ শ্রিংলা বলেন, ভারতে টিকা উৎপাদিত হলে বাংলাদেশ তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে।
‘শুধু সিনোভ্যাকের ওপর নির্ভর করা চলবে না’
সিনোভ্যাক ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা করছে জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মোজাহেরুল হক বেনারকে বলেন, “কোনো টিকা বাজারজাত করার আগে মানবদেহে তিনটি ধাপে পরীক্ষা করতে হয়।”
বর্তমানে সিনোভ্যাকসহ মানব শরীরে পরীক্ষার তৃতীয় ও শেষ ধাপে করোনাভাইরাসের আটটি টিকা রয়েছে বলে জানায় দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের করোনাভাইরাস ট্র্যাকিং সেন্টার।
তাদের তথ্যমতে, টিকা উদ্ভাবনের পর মানবদেহে পরীক্ষার আগে প্রথমে ইঁদুর বা বানরের ওপর এর প্রাথমিক কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর পর শুরু হয় মানবদেহে পরীক্ষা।
মানবদেহে পরীক্ষার প্রথম ধাপে টিকার প্রয়োজনীয় পরিমাণ ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখার জন্য অল্প কিছু মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়।
প্রধম ধাপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় ধাপে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা হয় বিভিন্ন বয়সের শতাধিক মানুষের ওপর। এই পর্যায়ে মূলত বয়সভেদে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চলানো হয় কয়েক হাজার মানুষের ওপর।
টিকাটি মানুষকে নির্দিষ্ট রোগ থেকে রক্ষা করতে পারছে কি না এবং মানবদেহে কোনো সমস্যা করছে কি না তা তৃতীয় ও শেষ ধাপে তা দেখা হয় জানিয়ে মোজাহেরুল হক বলেন, “যদি কোনো টিকা শতকরা ৫০ ভাগ লোককে রক্ষা করতে পারে তাহলে টিকাটিকে কার্যকর ধরা হয়।”
তবে করোনাভাইরাস টিকার জন্য “শুধু সিনোভ্যাকের ওপর আমাদের নির্ভর করা চলবে না” মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত বিশ্বের অন্য যেসব কোম্পানি করোনাভাইরাস টিকা তৈরির কাজ করছে তাদের সাথে কথা বলে টিকা কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা।
“অন্যথায় আমরা অগ্রাধিকার পাব না,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় বড় দেশ ওই সব কোম্পানির টিকা তৈরির আগেই টাকা দিয়ে উৎপাদন বুক করে রাখছে। এখন কথা না বললে পরে ওই সব কোম্পানি থেকে টিকা পাওয়া কঠিন হবে।
এদিকে “চীনা টিকা ছাড়াও অক্সফোর্ড ও আমেরিকান কোম্পানির টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে দেয়া উচিত,” মন্তব্য করে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমাদ বেনারকে বলেন, “আমার মনে হয় বাংলাদেশ সেটাই করবে।”
“কারণ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে অক্সফোর্ডের যে টিকার ট্রায়াল চলছে সেটির ট্রায়াল বাংলাদেশে হতে পারে,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে চীন করোনাভাইরাস টিকার ট্রায়াল দেবার মূল কারণ হলো, “তারা চায় করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোক।”
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হন গত ৮ মার্চ, এই রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করা গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনের গবেষণায় নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের ১৫০টির বেশি টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ চার হাজার ৫৮৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ১২৭ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট দুই কোটি ৪২ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন আট লাখ ২৭ হাজারের বেশি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- ০১৭১২ ১৭ ৪৭ ৯৬
ইমেইলঃ- newssylbangla@gmail.com
রংমহল টাওয়ার ৪র্থ তলা বন্দর বাজার, সিলেট।
Design and developed by M-W-D