জাপানি বিনিয়োগকে উষ্ণ অভ্যর্থনা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০

জাপানি বিনিয়োগকে উষ্ণ অভ্যর্থনা বাংলাদেশের

দৈনিক দিনরাত:

চীন থেকে সরে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার রফতানিতে অর্থ সহায়তা, মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি হ্রাস করা, দ্রুততার সাথে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের মতো সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছে।

এখানে সক্রিয় জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, এসব কোম্পানি যাতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয়, বা অন্যান্য জাপানি প্রতিষ্ঠানকে রাজি করাতে পারে।

এই নির্দেশনা এসেছে ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। উল্লেখ্য, বর্তমান জাপানি বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছে যে স্থানীয় ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার রফতানি সহায়তার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশে তৈরী পোশাকসহ বিদেশী মালিকানাধীন ‘এ’ টাইপ কোম্পানিগুলো রফতানির বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে নগদ প্রণোদনা পায় না। জাপানি বিনিয়োগকারীরা প্রস্তাব দিয়েছে যে রফতানিমুখ বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একই ধরনের প্রণোদনা দেয়া দরকার।

এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে।

চীন ত্যাগ করতে ইচ্ছুক জাপানি বিনিয়োগকারীদের ধরার জন্য ভারতও প্রতিযোগিতায় রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় পত্রিকা দি হিন্দুতে গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিযুস গয়াল আশ্বাস দিয়েছেন যে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি ফোকাসড গ্রুপ জাপানি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ দূর করার জন্য কাজ করছে।

জাপানি বিনিয়োগকারীরা উল্লেখ করেছেন যে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ইউনিটমূল্যের ১০ ভাগের কম। তারা বিদ্যমান নিবন্ধন ফি ২২ ভাগ থেকে হ্রাস করে ১০ করার প্রস্তাব করেছেন।

পিএমও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে সাত দিন সময় দিয়েছে।

নীতিনির্ধারকেরা বলছেন যে চীন ত্যাগ করতে ইচ্ছুক জাপানি কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এসব কোম্পানি চীন ছাড়তে চাচ্ছে।

নতুন জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগে এখানকার ব্যবসায়িক পরিবশ সম্পর্কে তথ্য লাভের জন্য বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের শরণাপন্ন হবে। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সের বাইরেও জাপানি বিনিয়োগকারীদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছে।

গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ-জাপান পাবলিক প্রাইভেট জয়েন্ট ইকোনমিক ডায়ালগের (পিপিইডি) এক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। সভায় বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে সমস্যাগুলো জরুরিভিত্তিতে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় পররাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিডা (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো সিরাজুল ইসলাম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চীনে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগ অন্যান্য স্থান সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিডা বাংলাদেশে ওই জাপানি বিনিয়োগকারীদের আকষ্ট করর জন্য কাজ করছে।

জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্সের সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে বৈষম্য দূর করতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ জাপানি কাজ করছিল। তাদের মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩৮৬ মিলিয়ন ডলার। এক দশক আগে তা ছিল ৮২টি জাপানি কোম্পানি।

বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০.৩ ভাগই তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছে। আর ২৩.৪ ভাগ একই অবস্থানে থাকতে চাচ্ছে। মাত্র ১.৬ ভাগ বিনিয়োগ হ্রাস করার কথা ভাবছে।

বর্তমান প্রায় ৮৭টি জাপানি প্রতিষ্ঠান চীন থেকে অন্য দেশে তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ বা ভারতে ব্যবসা সরিয়ে নিতে তাদেরকে জাপানি সরকার ২২.১০ কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করবে।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য এক হাজার একরের অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

Source টিবিএস

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ