মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা,বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত স্থাপনে অনুরোদ

প্রকাশিত: ৯:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা,বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত স্থাপনে অনুরোদ

দৈনিক দিনরাত:
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের জন্য মিয়ানমারের দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত স্থাপনে সহায়তা করবে বাংলাদেশ।

গত মাসে আইনজীবীদের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এক আবেদনে বাংলাদেশে আদালত স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানান মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে আইসিসি আদালত স্থাপনের যে প্রস্তাব উঠেছে তা আমরা জানতে পেরেছি। আমরা এখনও এ ব্যাপারে আইসিসি’র কাছ থেকে কোনো চিঠি পাইনি।”

“আইসিসি যদি আমাদের কাছে থেকে এ ব্যাপারে সহায়তা চায় তাহলে আমরা তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মো. মুসা বেনারকে বলেন, “আমার সবাই সাক্ষী দিতে চাই। আমরা বলতে চাই কীভাবে বর্মার (মিয়ানমার) মিলিটারি ও মগেরা আমাদের জুলুম করেছে, হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা তো আর ওখানে (হেগ শহরে) যেতে পারব না। আদালত কক্সবাজারে হলে আমরা সবাই সাক্ষী দিতে যাব। আমরা চাই এখানে আদালত হোক। আমরা বিচার চাই।”

তদন্ত করছে আইসিসি

নিয়মানুযায়ী আইসিসি সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ অথবা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুরোধে অথবা বিচারকদের অনুমতি সাপেক্ষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করে দলিলাদি সংগ্রহ করতে পারে আইসিসি প্রসিকিউটর অফিস।

২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলাটি নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আসে।

প্রথমেই প্রশ্নে আসে, মিয়ানমার আইসিসি সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় রাখাইনে রোহঙ্গিাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসি’র আছে কি না। মিয়ানমার আইসিসি’র এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তবে আইসিসি জানায়, মিয়ানমার সনদে স্বাক্ষর করা দেশ না হলেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসি’র আছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না তা তদন্ত শুরু করার কর্তৃত্ব চেয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট আইসিসি প্রাক-বিচারিক চেম্বাররের কাছে আবেদন করে প্রসিকিউটরের অফিস।

ওই বছর ১৪ নভেম্বর এ ব্যাপারে প্রসিকিউশনকে তদন্ত করার অনুমতি দেয় প্রাক-বিচারিক আদালত।

মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য দেবার সুবিধার্থে হেগ শহরের বাইরে আদালত স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে এ বছর ৪ আগস্ট তিন রোহিঙ্গার পক্ষে আইসিসি’র কাছে আবেদন জানান তিন আইনজীবী।

আবেদনে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো স্থানে আদালত প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানান তাঁরা।

প্রসিকিউটরের অফিস এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও প্রাক-বিচারিক চেম্বার রোহিঙ্গাদের এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য আইসিসি রেজিস্ট্রি অফিসকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে আইসিসির ওয়েবসাইটে।

নির্দেশনায় হেগ শহরের বাইরে, সম্ভব হলে বাংলাদেশে এই আদালত প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না তা মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে রেজিস্ট্রি অফিসকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রাক-বিচারিক আদালত।

আইনি কোনো সমস্যা নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী, হেগের বাইরে আদালত স্থাপন করতে পারে আইসিসি। এটি নিয়ে আইনগত কোনো সমস্যা নেই। বরং, এটি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গ্রহণযোগ্য করবে।”

“বিচার ব্যবস্থায় বলা হয়, যেখানে ভূক্তভোগীরা থাকবে সেখানে আদালত স্থাপন করাটা ভালো,” মন্তব্য করে ড. মিজান বলেন, “এর ফলে ভুক্তভোগীরা তাদের কথা সহজে বলতে পারবে, আসতে পারবে। আলামত তুলে ধরতে পারবে।”

“এর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ করা সম্ভব,” যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে নেদারল্যান্ডে চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া যেমন কঠিন তেমনি মামলার আলামত নেওয়াও অসুবিধাজনক বলে জানান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আদালত স্থাপন করা গেলে যারা ভিকটিম তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারবে।”

শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ফোন

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন এসপার।

তবে ঢাকাস্থ আমেরিকান সেন্টারের পাঠানো বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনার উল্লেখ নেই। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সাথে মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সকল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বঙ্গোপসাগরে মেরিটাইম নিরাপত্তাসহ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা প্রাধান্য সংক্রান্ত বিষয় ও বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন মার্ক এসপার।

এ ছাড়াও বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিও শেখ হাসিনার সাথে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলোচনা করেন বলে জানানো হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বিবৃতিতে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ