রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ‘ব্যাপকতার ধরন’ তদন্ত করবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ‘ব্যাপকতার ধরন’ তদন্ত করবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

দৈনিক সিলেটের দিনরাত:
~

মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের দমন অভিযানের আগের ও ওই সময়ের সহিংসতার সম্ভাব্য বৃহত্তর অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করছে। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ওই সহিংসতায় গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল।

নিরাপত্তা বাহিনীর ওই অভিযানের রেশ ধরে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। তারা বলছে, তারা গণহত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছিল।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান পরিচালিত করেছিল। তবে তারা জানিয়েছে, কিছু গ্রামে দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য কয়েকজন সৈন্যের কোর্ট মার্শাল করেছে। তবে অপরাধীদের কী শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মঙ্গলবার সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো নির্যাতনের সম্ভাব্য বৃহত্তর চিত্রের কথা স্বীকার করে।

এতে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর পরিচালিত জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল সরকার-সমর্থিত কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত সৈনিকেরা যুদ্ধাপরাধ করেছে, ফলে এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত।

সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ২০১৬-১৭ সময়কালে রাখাইন অঞ্চলের সহিংসতার বৃহত্তর অবস্থা তদন্ত করছে।

এতে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়নি। রয়টার্স এ ব্যাপারে আরো কিছু জানতে চেয়ে টেলিফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের দুই সৈন্য দি হেগে সাক্ষী হিসেবে আবির্ভূত হয়। তারা রাখাইনে কয়েক ডজন গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। তারা নিহতদের গণকবর দেয়ার কথাও জানান।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার মাইকেল ব্যাচেলেট সোমবার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর করা ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিকার দাবি করন।

এর সপ্তাহখানেক আগে জাতিসংঘ জানায়, মিয়ামার রোহিঙ্গাদের কান কিয়া গ্রামকে সরকারি মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে। সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওই গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পর বুলডোজার দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ ও রাখাইন রাজ্যের মধ্যকার সীমান্ত নাফ নদী থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে থাকা কান কিয়া গ্রামে ২০১৭ সালের সামরিক বাহিনীর অভিযানের আগে শত শত বাড়িঘর ছিল। সামরিক অভিযানের পর গ্রামবাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায।

একসময় যেখানে কান কিয়া গ্রামটি ছিল, এখন সেখানে কয়েক ডজন সরকারি ও সামিরক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধও করা হয়েছে।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালে যে ৪০০ গ্রাম ধ্বংস করেছিল, কান কিয়া সেগুলোর একটি। আর অভিযানের পর যেসব গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হয়েছে, এটি তার একটি।

কান কিয়া গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ রফিক। তিনি এখন বাংলাদেশের একটি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি বলেন, আমরা যাতে আর না ফিরতে পারি, সেটাই তাদের উদ্দেশ্য।

মিয়ানমারবিষয়ক সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার দূত ইয়াঙ লি বলেন, সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন কঠিন করে তুলেছে। তারা যেখানে বসবাস করত, সেখানকার কোনো নাম, কোনো প্রমাণ আর রাখতে চাচ্ছে না। এভাবে তাদের মৌলিক পরিচিতি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে চ্যালেঞ্জ না করে জাতিসংঘ এমনটা করার সুযোগ দিচ্ছে।

জাতিসংঘ কেন বাধা দিচ্ছে না, এ ব্যাপারে সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো জবাব দেননি।

Source রয়টার্স

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ