দেখে যান কামরান ভাই সিলেটের মানুষ কাঁদছে

প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

দেখে যান কামরান ভাই সিলেটের মানুষ কাঁদছে

কামরান ভাই- দেখেন যান সিলেটবাসী কাঁদছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে প্রিয় শহরের মানুষ। হাসিমাখা মুখটি চোখে লেগে আছে। এখনো মানুষ বিশ্বাস করে- ‘কামরান ভাই মারা যায় নি’। ডাক দিলেই পাওয়া যাবে। বিপদে ছুটে আসবেন আপনি। অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছে না- আপনি নেই। এতো ভালোবাসে আপনাকে। এতো কান্না। এতো শোক। আর কারো বেলায় কখনো ঘটেনি সিলেটে। সব মত ও পথের মানুষ আজ কাঁদছে। কারো মন ভালো নেই। আপনাকে শেষ বিদায় জানাতে চেয়েছিলো সবাই। মহামারী করোনার কারনে পারেনি। এজন্য দু:খটা আরো বেশি। বিদায় জানাতে পারলাম না- এই আফসোসে দু:খ বাড়ছে। অন্তত শেষ বিদায়ে আপনার পাশে থাকার ইচ্ছা ছিলো সবার। কেউ পারেনি। চিরঘুমে চলে গেলেন আপনি। নিরব হয়ে গেলো আপনার প্রিয় শহর সিলেট। আপনি বেঁচে গেছেন কামরান ভাই। আপনার প্রাণের সিলেট আজ বিপর্যস্ত। করোনার কাছে একেক করে প্রিয়জনেরা আত্মসর্ম্পন করছে। আপনি হয়তো সে দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলেন না। এ কারনে আগে-ভাগেই আপনি শরিক হলেন মৃত্যুর মিছিলে। প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে মানুষ। একটু শান্তনা চায়। কে দেবে আপনার মতো শান্তনা। কে টেনে নেবে বুকে। এখন বড় দুর্দিন চলছে।

অথচ সিলেটের নানা বিপর্যয়কালীন সময়ে আপনি ছিলেন অগ্রভাগে। অভয় দিয়েছেন। শান্তনা দিয়েছেন। বিপদে এগিয়ে আসেন আপনি। হোক সে মিত্র কিংবা শত্রু। যখন আপনার কাছে বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষ ছুটে গেছে আপনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যখন পৌর সভার চেয়ারম্যান হলেন তখন পেয়েছিলেন গ্রামীন এক সিলেট শহর। সেই শহর আপনার হাত ধরে আজ উন্নত জনপদ। নিজের স্বার্থের জন্য কখনো কোনো অপশক্তির কাছে আত্মসর্ম্পন করেননি। ভোটে জিততে কখনো রাতের আধারে গিয়ে পায়ে ধরেননি। সিলেটের মানুষের প্রতি আপনার অগাদ বিশ্বাস ছিলো। মানুষ আপনাকে হতাশ করবে না। আমৃত্য সেই বিশ্বাস ছিলো আপনার। মানুষ আপনাকে দুরে সরিয়ে দেয়নি। আপনাকে বিপর্যস্ত করে তোলেছিলো একটি দুষ্ট চক্র। এরা চায় সিলেট নগরের মানুষকে বিপর্যস্ত করে তোলতে। এরা চায়- সিলেটকে হাতের মুঠোর নিয়ে ইচ্ছে মতো খেলতে। আপনি সেটি বুঝেছিলেন। এ কারনে নিকটজনদের শত অনুরোধে দুই দফা ভোটের আগে আপনি রাতের আধারে আতাঁত করেননি। মাথা নত করেননি ওদের কাছে। এজন্য ওরা আরো ক্ষেপে উঠেছিলো।

নির্বাচন এলেই নানা অপপ্রচারে বিদ্ধ আপনি। নানা চক্রান্ত। বিরোধীদের নানা চক্রান্তে বিপর্যস্ত আপনি। আপনি ভোটে জেতার জন্য ‘সমঝোতা’ করেননি। পরিচিত জনেরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। চোখে চোখ রেখে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। বিষয়টি নিজেও জানতে। সব আপনার কাছে পরিস্কার ছিলো। এরপরও সিলেটের মানুষের উপর আস্থা হারাননি। কিংবা ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হননি। করতে পারতেন অনেক কিছু। বলতে পারতেন সব। ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। বিশ্বাস করতেন- ভালোবাসার বিকল্প কিছুই নেই। মনে পড়ে- এক নির্বাচনে আপনার বুকে বন্দুক ধরেছিলো এক যুবক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আপনি শক্তিধর নেতা। এরপরও ঘটনাটির জন্য ওই যুবকের বাবা এসে মাফ চাইলেন। আপনি মাফ করে দিলেন। কোনো প্রতিশোধ নিলেন না। এতো বড় মন আপনার। কোটি মানুষ খেলা করতো আপনার মনে। নিজের বিশাল মনের ভেতরে সবার জন্য আলাদা বসতি গেড়েছিলেন। এ কারনে চিন্তায়, ধ্যানে থাকতো প্রিয় সিলেটের মানুষ। কামরান ভাই- আপনি কবরে শুয়ে আছেন। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।

আজ আর কোনো ভয় নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। নিরবে ঘুমাচ্ছেন। কেউ আপনাকে জাগাবে না। আপনার সঙ্গে, আপনার প্রতি সব ঘৃনাকে যেনো কবর দিয়েছেন আপনার বিরোধীরাও। এ কারনে তারাও এখন কাঁদছে। চিৎকার করতে পারছে না, তবে কাঁদছে। এই কান্নাটা আপনার দেখার বড়ই প্রয়োজন ছিলো। আপনি দেখলেন না। আপনি শুনলেন না তাদের আর্তনাদ। এই আর্তনাদ বড়ই কষ্টের। কামরান ভাই- এতো বড় মনের অধিকারী হলেন কীভাবে। প্রতিশোধ নয় বরং ভালোবাসা দিয়ে জয় করার শিক্ষা দিয়েছেন আপনি সিলেটবাসীকে। সিলেটের রাজনীতির ‘মহানায়ক’ আপনি। আরেক কামরান আর আসবে না। সর্বজন গ্রহনযোগ্য নেতারও জন্ম হবে না। করতেন আওয়ামী রাজনীতি। বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীদেরও নেতা ছিলেন আপনি। সবাই আপনাকে ভালোবাসতো। দুর্দিনে আপনার পরামর্শ নিতো। আপনি কখনো কাউকে ফিরিয়ে দেননি। সিলেটের ‘সম্প্রতির রাজনীতির’ সেতুবন্ধন ছিলেন আপনি। সব সময় সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। বিরোধীতার খাতিরেও বিরোধীতা করেননি। নিজে কখনো আত্মসর্ম্পন করেননি নিসংকীর্ণতার সঙ্গে। এজন্য প্রায়ই বিতর্কিত হয়েছেন আপনি। নানা বিতর্ক আপনাকে নিয়ে। দল, দলের বাইরেও আপনাকে নিয়ে নানা কথা হয়েছে। পরোয়া করেননি কোনো কিছু। যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছেন। মানুষ হিসেবে সবাইকে এক চোখে দেখেছেন। এ কারনেই তো আপনি কামরান। জনতার কামরান, গণ মানুষের নেতা। গণজাগরন মঞ্চে গিয়ে আপনি গান গেয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতাদেরও দুরে সরিয়ে রাখেননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে চলতেন। নিজ এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাণের শহীদ মিনারে গিয়ে খোলা গলায় গান গেয়েছেন। কে বুঝবে আপনাকে। সিলেটের সম্প্রতির নায়কের এই ক্যামিস্ট্রি ধারন ও বহনের ক্ষমতা অনেকরই ছিলো না। এ কারনেই আপনি পদে পদে বাধাগ্রস্থ হয়েছেন। স্বার্থবাদী মহলের ক্রমাগত ছুড়ে দেওয়া তীরে আপনি বিদ্ধ হয়েছে। কখনো আপনি প্রতিবাদ করেননি। কাউকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাড় করাননি। বরং বলতেন- ওদের কাছে টানতে না পারা ছিল ব্যর্থতা। জানি না কেমন আছেন- কামরান ভাই। দেখে যান সত্যি সত্যি আপনার প্রিয় শহরের সব মানুষ আপনার জন্য কাঁদছে।

ওয়েছ খছরু, সিলেট।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ