আন্ত:আফগান সংলাপ পাক-মার্কিন সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক

প্রকাশিত: ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০

আন্ত:আফগান সংলাপ পাক-মার্কিন সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক

দৈনিক সিলেটের দিনরাতঃ

চলতি মাসের শুরুর দিকে কাতারের দোহায় বহুল প্রতীক্ষিত আন্ত:আফগান সংলাপ শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রথমবারের মতো আফগান সরকার আর তালেবান প্রতিনিধিরা সরাসরি আলোচনায় বসেছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে মার্কিন-তালেবান চুক্তি হয়, সেখানে আফগান সমঝোতা প্রক্রিয়া এবং দেশে স্থায়ী শান্তি আনতে আন্ত:আফগান আলোচনার উপর জোর দেয়া হয়। আফগানিস্তানের পুরো শান্তি প্রক্রিয়াটা দুটো স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে: মার্কিন-তালেবান চুক্তি, আর আন্ত:আফগান সংলাপ। ওয়াশিংটন, তালেবান আর কাবুল – তিন পক্ষই আলোচনায় যুক্ত হওয়ায় আফগানিস্তানে একটা সমঝোতার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়টি সবসময় ওয়াশিংটন আর ইসলামাবাদের সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন-তালেবান চুক্তিতে ইতিবাচক সহায়তার কারণে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আন্ত:আফগান সংলাপেও পাকিস্তানের ভূমিকা রয়েছে এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিও রয়েছে, যেটা পাক-মার্কিন সম্পর্কের জন্য একটা ভালো খবর।

দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যে কারণে দোহাতে অনুষ্ঠিত আফগানদের আলোচনাটা ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম বিষয় হলো দোহা চুক্তির পর থেকেই পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জোরালো বিনিময় চলছে। আফগান অভ্যন্তরীণ সংলাপের কয়েক মাস আগে থেকেই দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারীরা সরাসরি যোগাযোগের মধ্যে আছেন। তালেবানদের বর্তমান অবস্থায় যাওয়ার কারণে পাকিস্তানকে দোষারোপ বাদ দিয়ে ইসলামাবাদের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া কাবুল একটা সম্মিলিত সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর ওয়াশিংটন কাবুল সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় এবং ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা কাটছাট করে। তাছাড়া পাকিস্তানকে আলোচনার জন্য বাধা হিসেবেও উল্লেখ করেনি যুক্তরাষ্ট্র, যেটা তাদের সম্পর্কের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।

সেই সাথে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আর সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার প্রশাংসাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, পাক-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগে যে আস্থার ঘাটতি ছিল, সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। দুই পক্ষের সহযোগিতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে, যখন আফগান অভ্যন্তরীণ সংলাপের একদিন আগে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার আর পাকিস্তানের চিফ অব আর্মি স্টাফ শান্তি আলোচনা নিয়ে কথাবার্তা বলেন। মার্কিন বিশেষ দূত জালমাই খলিলজাদের সাথে পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের প্রশংসা করে খলিলজাদ বলেন: “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মিত্রদের ভূমিকাকে কখনও ভুলবে না, যারা এই যুদ্ধ শেষ করার দীর্ঘ সংগ্রামে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে”।

দ্বিতীয় বিষয় হলো পাকিস্তান আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। আফগানিস্তানের পছন্দের না হওয়া সত্বেও পাকিস্তান এখানে ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আফগানিস্তানে পাকিস্তান কোন একটা পক্ষ নিচ্ছে, এই ধারণার অপনোদনের জন্য পাকিস্তান প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আফগান প্রেসিডেন্ট যদিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বহু কথা বলেছেন, কিন্তু পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে না গিয়ে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর আশরাফ ঘানিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর পক্ষ নেয়নি। এর পর থেকে কাবুলে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে পাকিস্তান, খান আর ঘানির টেলিফোন আলাপ আর বাজওয়ার আফগানিস্তান সফরের মধ্য দিয়ে যেটা স্পষ্ট হয়েছে।

সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার বাধাগুলোই শুধু দূর হবে না, একই সাথে একটা প্রাণবন্তু পাক-মার্কিন সম্পর্কও গড়ে উঠবে। দুই দেশই ট্যাকটিক্যাল পর্যায়ের বিরোধ থেকে তুলনামূলকভাবে দূরে রয়েছে, এবং সে কারণে সম্পর্কের অন্যান্য দিক নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। আফগান অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরুর পর থেকে এই সম্ভাবনাটা ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছে। আফগানরা যদি আলোচনার টেবিলে না আসতো, পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা সেখানে আবার তিক্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

একটা সত্য আজ স্পষ্ট, আফগান অভ্যন্তরীণ সংলাপ ইসলামাবাদ আর ওয়াশিংটনকে নিজেদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের একটা ক্ষেত্র দিয়েছে এবং সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সুযোগ করে দিয়েছে। আলোচনায় বড় ধরণের অগ্রগতি যদি না-ও হয়, তবু দুই দেশের ভেতরের এই সহযোগিতার মেকানিজম টিকে থাকার সম্ভাবনাটাই বেশি, এবং সেটার সূত্রে ভবিষ্যতে সহযোগিতার আরও দুয়ার উন্মুক্ত হবে।

Source দ্য ডিপ্লোম্যাট

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Live TV