১০দিনেও আসছে না রিপোর্ট : টেস্টে অনাস্থা জৈন্তাপুরবাসীর

প্রকাশিত: ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

১০দিনেও আসছে না রিপোর্ট : টেস্টে অনাস্থা জৈন্তাপুরবাসীর

 

 

লুৎফুল করিম রাজ্জাকঃ

জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে সংগৃহীত কোভিড-১৯ এর নমুনার রিপোর্ট সময়মত আসছে না। প্রথমদিকে যেখানে নমুনা দেওয়ার ২দিনের ভেতরে রিপোর্ট আসত সেখানে এখন দশদিন পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না রিপোর্ট। এদিকে নমুনা দিয়ে অনেকেই রিপোর্ট আসার আগপর্যন্ত ঘুরাফেরা করছেন জনবহুল স্থানে, যোগ দিচ্ছেন কর্মক্ষেত্রে। তাদের একাধিকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মনে করছেন রিপোর্ট পজিটিভ আসলে তো ২/৩দিনের ভেতরে ফোন করে জানানোর কথা। যখন জানায়নি তাহলে পূর্বের ধারণানুযায়ী রিপোর্ট নেগেটিভ, তাই তারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেগেটিভের ম্যাসেজ পাওয়ার অপেক্ষায়। অথচ তাদের রিপোর্ট এখনো আসেইনি।

এতে করে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কারণ রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা লোকদের মাঝে কার পজিটিভ বলা যায় না। তিনি উম্মুক্ত চলাফেরা করায় থাকছে সংক্রমণের শঙ্কা। অন্যদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের রি-টেস্টের রিপোর্টও আটকে আছে। এতে করে তারা সুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সদ্য কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত হওয়া বাতায়ন প্রধান পরিচালক ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের বিভাগীয় সম্পাদক রাসেল মাহফুজের সাথে কথা হয়। তিনি জানান- “করোনার রিপোর্ট ঠিকমত আসছে না। এটা আমাদের জন্য একপ্রকার চরম হতাশাজনক। আমি আমার রি-টেস্টের রিপোর্ট পেয়েছি ১১ দিন পরে। অথচ এই ১১ দিন আমি পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম কিন্তু তারপরও বের হতে পারিনি, ফিরতে পারিনি কর্মক্ষেত্রে। আমি চাই স্বাস্থ্য অধিদফতর এই বিষয়টি আমলে নিক এবং দ্রুত রিপোর্টপ্রাপ্তির ব্যবস্থাগ্রহণ করুক।”

সময়মত রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে পজিটিভ রোগীরা চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা ঠিক কি ট্রিটমেন্ট নেবেন এব্যাপারে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারছেন না। অনেক রিপোর্ট প্রত্যাশী আবার ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে ভালো হওয়ার কয়েকদিন পর রিপোর্ট আসলে জানতে পারেন তাদের করোনা পজিটিভ। তখন তারা সুস্থ অবস্থায়ই মেইনটেইন কর‍তে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন, যা একপ্রকার বিরক্তিকর। কেউকেউ তো আবার প্রথম টেস্টের রিপোর্ট ৯দিন পর পজিটিভ পেয়ে ১/২ দিন পর গিয়ে রি-টেস্টের জন্য সেকেন্ড স্যাম্পল জমা দিচ্ছেন। মধ্যখানে কোভিড-১৯ এর কোন চিকিৎসাই পাচ্ছেন না বা গ্রহণ করছেন না তারা। এমনিতেই বা ফার্মেসি থেকে নরমাল ট্রিটমেন্ট নিয়েই সুস্থ হচ্ছেন। এটাকে অনেকেই আবার ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের দাবি, “এতে করে জনমনে যে করোনা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা কিছুটা দূর হবে। মানুষের যে ধারনা ছিল, করোনা মানেই মৃত্যু এই ধারনার খণ্ডন হবে। কারণ, তারা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে, একজন পজিটিভ রোগী কোন ধরনের ট্রিটমেন্ট ছাড়াই সুস্থ হচ্ছে। এর ইতিবাচক দিক হল, আতঙ্ক দূর হবে, সতর্কতা বাড়বে আর এভাবেই মানুষের ইমিউনিটি ডেভেলপ হবে।”

এদিকে অনেকেই উপসর্গ থাকার পরও পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। সরকারি ডাক্তারের সংখ্যা যেমন উপজেলায় কম সেই সাথে নেই পর্যাপ্ত প্রাইভেট ডাক্তারও। যারা আছেন তারাও এখন নিয়মিত রোগী দেখছেন না। তাই করোনার এই সময়ে জৈন্তাপুরে চিকিৎসার এক বিরাট সংকট দেখা দিয়েছে। মূলত এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো বিগত ৬-৮ জুনের প্রায় ৩০ টি নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকায় প্রেরিত নমুনাগুলোর রিপোর্ট আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য টেস্টে অনাস্থা তৈরি হচ্ছে জৈন্তাপুরবাসীর।

এ ব্যাপারে উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে ঘটিত কমিটির সদস্যসচিব, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার বলেন, “যেভাবে বিলম্বে রিপোর্ট আসছে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে এবিষয়ে দাবি উত্তাপনও করেছি। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসতে অনেক দেরি হয়ে যায় এনিয়ে আমরা সংকুচিত। আশকরি সিলেটের নমুনা আর ঢাকায় পাঠানো লাগবে না। এখন সিলেটেই পরীক্ষা হবে এবং দুয়েকদিন পর রিপোর্ট চলে আসবে।”

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (১৭জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী) জৈন্তাপুর উপজেলায় করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮জন আর সুস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছেন ৪৫জন। সার্বিক বিবেচনায় জৈন্তাপুরের অবস্থা ভালো। রোগী আছেন মাত্র ১২জন। সচেতন মহল মনে করেন, যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলে চলাফেরা করেন তবে করোনার সংক্রমণ আরো আরো কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তারা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ