সিলেট ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২০
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে সিলেটের প্রবীন সাংবাদিক আরটিভির ষ্টাফ রিপোর্টার কামকামুর রাজ্জাক রুনু’র ফেইসবুকে হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
“চোখের ঘুম কেড়ে নিলো স্মৃতির পাহাড়।”
সিলেটের জননন্দিত নেতা ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর আমার ফেসবুক পাতায় দেয়া দ্বিতীয় স্টেটাসের অংশ হচ্ছে এটি। ঘুম আসছেনা। ভাবছি আর একসাথে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাবো। রাত তখন ৩টা ২০ মিনিট হবে।ফেসবুকে ঢুকেই চোখে পড়লো সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের একটা স্টেটাস “আমাদের কামরান ভাই আর নেই”। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইমজা’র গ্রুপ পেজে ঢুকে দেখি এ ধরনের কোন তথ্য নেই। ভাবছি কি করবো।কারণ মাত্র চার/পাঁচদিনও হয়নি আওয়ামীলীগের প্রিসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সাবেক মেয়র কামরান মারা গেছেন বলে ফেসবুকে মিথ্যা স্টেটাস দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে কিছু লোক। তার রেষ না কাটতেই মুশফিকের এমন স্টেটাস।ইমজা’র গ্রুপে আমি ম্যাসেজটি দিতেই ছোটভাই চ্যানেল আই’র সাকী বলে ‘বলেন কি ভাই। বললাম ফেসবুকের তথ্য এটা। এরই মধ্যে মুশফিক এবং আরেক যুবলীগ নেতা মেহেদি কাবুলের সঙ্গে কথা বলে ফেলি। তথ্য সঠিক বলে তারা জানায়। মুশফিক জানায়, ভাবি খবর জেনে খুব কান্নাকাটি করছেন। আমারও কানে আসছিলো কান্নার শব্ধ। নিশ্চিত হওয়ায় পর আমিও দিয়ে দেই স্টেটাস।
স্টেটাসটা দিয়ে শেষ করতে পারিনি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বন্ধু শুভাকাঙ্খিরা একের পর এক কল করতে থাকেন। আমেরিকা থেকে নুরুল আমীন মানিক,রব্বানী,এজাজ,কানাডা থেকে সেলিম জুবেরী,লন্ডন থেকে নজরুল ইসলাম বাসন,মল্লিক শাকুর ওয়াদুদ সাকু,রুবেল চেীধুরী,আরটিভির বাহরাইন প্রতিনিধি মিসবাহসহ দেশ বিদেশের অনেকেই শুধু নিশ্চিত হওয়ার জন্য কল দেন।এরই মধ্যে মহানগর আওয়মীলীগের সাবেক সম্পাদক বন্ধু আসাদ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন বন্ধুর সাথে কথা হয়। এরপর ফজরের নামাজ পড়ে কামরান ভাইয়ের জন্য দোয়া শেষে ঘুমানোর অনেক চেষ্টা।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিলনা।ফলে ফেসবুকে “চোখের ঘুম কেড়ে নিলো স্মৃতির পাহাড়” স্টেটাসটি দিয়ে নিচে লিখেছিলাম ওপারে ভাল থাকবেন গণমানুষের নেতা প্রিয় কামরান ভাই।
কামরান ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনে গড়ে ওটা সম্পর্কের মাঝে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনী।এর আগে ভালমন্দ জিজ্ঞাসার মধ্যেই সম্পর্ক সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ১৯৯৫ সালে কামরান ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘনীভুত হতে থাকে।তখনও তিনি নন্দিত নেতা হয়ে ওঠেননি।পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়েছেন। আমি তখন জাতীয় দৈনিক আজকের কাগজ এর সিলেট ব্যুরো প্রধান।অফিসের নির্দেশনা পৌর নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিন একটি স্টোরি এবং একটি সাইড স্টোরি দিতে হবে। আমি তখন প্রায় প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে এবং প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবিসহ নিউজ কভার করতে থাকি। আজকের কাগজে পজিটিভ নিউজ দেখে তিনি ফোনে এবং লোক পাঠিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানান।এক পর্যায়ে ঢাকা অফিস থেকে আরেকজন স্টাফ এসে আমার সঙ্গে যুক্ত হন।নির্বাচনে বিজয়ী হন কামরান ভাই।এরপর দেখা হলেই বলতেন রুনুভাই প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিকই নির্বাচনে কমবেশী ভুমিকা রেখেছে।তবে আপনার আজকের কাগজ এর কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
এরপর ২০০৩ সালে সিলেট সিটি’র প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে ফের আওয়ামীলীগের প্রার্থী হন কামরান ভাই।এবার অরেকটু গুরুত্ব দিয়ে আজকের কাগজ নির্বাচনকে কাভারেজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা অফিসের স্টাফ রিপোর্টার ওমর ফারুক এসে আমার সঙ্গে যোগ দেন। (ওমর ফারুক পরে যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করতেন।২০১৭ সালে না ফেরার দেশে চলে যান এই প্রিয় সহকর্মীটি)। মনে পড়ে সেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কামরান ভাই খবর পাঠিয়েছিলেন যেনো ঢাকার স্টাফকে নিয়ে একবার বাসায় যাই। তখন আমার শিক্ষানবীশ ক্যামেরাম্যান (ক্যামেরাপার্সন) ছিল মামুন হাসান। আমরা ৩জন এবং সুমি ফটো স্টুডিও থেকে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক আতাভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় যাই।জয়ী হওয়ারপর প্রচুর মিষ্টি বিতরণ চলছে।আমাদেরকেও সেই মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করানো হয়।
দারুন ব্যস্ততার মাঝেও আমার ঢাকা অফিসের স্টাফকে সেদিন বলছিলেন,আপনার বসদের গিয়ে বলবেন ভালো কাভারেজের জন্যে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।আর বলবেন, সিলেটে তারা একজন ভাল মানুষকে নিয়োগ দিয়েছেন।তাঁর এই কথাটি শোনার পর আমি প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি মানুষকে সম্মানিত করতে পছন্দ করেন।প্রথমত আমি তাঁর বয়সে অনেক ছোট দ্বিতীয়ত তিনি একজন নির্বাচিত মেয়র। কিন্তু তারপরও তিনি আমাকে আপনি এবং ভাই বলেই সম্বোধন করতেন। সেদিনের পর থেকে তার প্রতি আমার ধারনা বদলে যায়।তার সম্পর্কে অতীতে কিছু বাজে ধারনা পেলেও বাস্তবে কামরান ভাইয়ের এই গুনটি আমার ধারনা পাল্টে দেয়।
তিনি যখন দায়িত্ব পালন করতেন তখন সংবাদ সংগ্রহের কারনে হোক আর অন্য কারনে হোক দেখা হলে প্রায়ই বলতেন,রুনু ভাই আপনি এতো সহজ সরল কেন?বলতাম এ কথা কেন বলছেন। বলতেন আপনার পেশায় থেকেও কতলোক কতকাজে আসে আপনি তো কোনদিন কোনকাজে আসেন না। আমি বলতাম নিউজের কাজ ছাড়া তো আমার তেমন কাজ নেই।এরপর মাঝে মধ্যে উনি নিজে ফোন করে বলতেন অমুকের সঙ্গে দেখা করে তমুক বিজ্ঞাপনটা আপনার পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করবেন।উদ্দেশ্য হলো কমিশন বাবদ কিছু আয় যাতে আমার হয়।কোন স্বার্থ ছাড়া খোঁজ খবর নেয়ার এই যে মানসিকতা সেটা অনেকেরই থাকেনা যা কামরান ভাইয়ের ছিল।
কামরান ভাই দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাকে সঙ্গে নিয়ে তখনকার সময়ে ঢাকার সাংবাদিকরা তাঁর সাক্ষাৎকার নিতেন।যাদের মধ্যে মেজবাহ আহমেদ,মোস্তাক হোসেন,আমীনুর রহমান তাজ,মাহমুদ আল ফয়সাল,ফরিদ আলমসহ অন্যরা ছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়ে বেরিয়ে আসার পর এদের অনেকেই মন্তব্য করতেন ‘কামরান ভাইতো দারুন মাই ডিয়ার মানুষ ।
আগেই বলেছি মানুষকে সম্মানিত করে নিজে সম্মানিত হতেন কামরান ভাই।একবার আজকের কাগজ এর সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন হবে। ঢাকা অফিস থেকে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাজী ফারুকুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম আসবে।আমি কামরান ভাইকে আগেরদিন বলেছিলাম হোটেল গুলশানের এই সম্মেলনে যদি সম্ভব হয় একটা ঢু মারবেন। তাতে আমার সম্মান বাড়বে।
পরদিন যথা সময়ে হাজির হলেন কামরান ভাই। আর আমাকে সেদিন এতো সম্মানিত করলেন যা আমৃত্যু ভুলার নয়।তিনি কাজী ফারুকুল হাসানকে বললেন,“এই যে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি আমাকে পরামর্শ দেয় কারা জানেন- এই রুনু ভাইয়ের মতো মানুষেরা। তাদেরই পরামর্শ নিয়েই চলে আমাদের কার্য্যক্রম।এই কথাটি বলে কামরান ভাই মোটেও ছোট হননি।কিন্তু আমার যে কি উপকার করেছিলেন তা কেবল আমি জানি।ফারুক ভাই অফিসে গিয়ে মিটিংয়ে এটা বলেছেন।সম্পাদক লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী শাহেদ আহমেদ নিজে ফোন করে বলেন, কেমন আছো রুনু।কামরান সাহেবদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলবা। আমরা তোমাকে সহকারি দেবো আর যা সুবিধা দেয়া যায় ফারুক সাহেব ব্যবস্থা নেবে। এখানেই শেষ নয়,আমার অজান্তে আরো বলে দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তার আত্মীয় স্বজনও আমার চেনাজানা।এই যে সম্মান প্রদান এটা না করলেও পারতেন কামরান ভাই।কিন্তু তিনি আন্তরিকভাবে আমার মঙ্গল চান বলেই সেদিন
এতোটুকু করেছিলেন।
এতোক্ষন স্মৃতির পাহাড় থেকে খসে পড়া দু’একটি টুকরোর বর্ননা তুলে ধরলাম। এবার সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরি আরো কিছু স্মৃতিকথা।
একবার আমাদের গ্রামের বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়ায় আমার চাচাতো ভাইয়েরা একটি বড় ধরনের দোয়া মাহফিল ও আপ্যায়ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আমি তাকে আমন্ত্রন জানাই। জানতে চাইলেন সেখানে বড় মাপের আর কে কে যাবেন। আমি বললাম বড় মাপের বলতে আমার তালতো ভাই মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস,সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমদ,শফি চেীধুরী,কাইয়ুম চৌধুরী,আমাদের সিলেট প্রেসক্লাবের সাংবাদিক বন্ধুরা এরাই মুলতঃ আমন্ত্রিত। বললেন,কেউ যান বা না যান আমি কিন্তু যাবো। তার কথা শুনে আমি মনে মনে ভাবছিলাম নেতারা বলার খাতিরে অনেক কিছুই বলেন।কিন্তু বাস্তবে সবকিছু সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এ ক্ষেত্রে হয়তো এমনটি ঘটবে।। কিন্তু না,অনুষ্ঠানের দিন হঠাৎ তার ব্যাক্তিগত সহকারি খোকনের ফোন। স্যার তো কাছাকাছি চলে এসেছেন।এখন এই জায়গায় আছেন। আমার আলাপ শুনেই মুহুর্তে চারদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। কারন তখন তিনি সিলেটের জন নন্দিত নেতা।যেখানে যান শ্লোগান ওঠে “সিলেটবাসীর প্রিয় নাম-বদর উদ্দিন কামরান”। তিনি এর আগে আর আমাদের এলাকায় যাননি।ফলে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য দূরদুরান্তের মানুষজন ছুটে আসে আমাদের বাড়িতে। প্রিয় কামরান ভাই সেদিন আমাদের এলাকাবাসীর কাছে আমার মুখ উজ্জল করে আরেকবার সম্মানিত করেছিলেন।অথচ তিনি না গেলেও পারতেন । কিন্তু আমাকে তিনি আন্তরিকভাবে পছন্দ করতেন বলেই কথা রেখেছেন। এখানেই শেষ নয় শহরে যখনই কোন স্বজনের বিয়ে সাদী হতো। আমি বললে তিনি একটু সময়ের জন্য হলেও ঢু মারতেন।কোনদিন না বলেননি কামরান ভাই ।
আমার স্ত্রী শেলী চেীধুরীর সঙ্গে যেদিন প্রথম দেখা সেদিন হয়ে যায় আরেক কাহীনি।কামরান ভাই তাকে দেখেই সালাম করে আপনি আর ভাবি বলে সম্বোধন করছিলেন। কিন্তু আমার স্ত্রী তা মানতে রাজী নন। তার কথা আপনি আমাকে ছোট বোনের মতো দেখবেন আর তুমি বলে ডাকবেন। কিন্তু আগেই বলেছি কামরান ভাই অন্যকে সম্মানিত করে নিজে সম্মানিত হতেন। তিনি তাঁর ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। অনেক বলেও তার অভ্যেসটা আর বদলানো যায়নি।আর মেয়ে কাশফা রাজ্জাক চেীধুরী জুহা তো আমার সঙ্গে গিয়ে তাঁর বাসায় একদিন দাওয়াত খেয়েছিল ।শুধু সাংবাদিকদের দাওয়াত ছিলো। সেই আদর আপ্যায়নের স্মৃতি এখনও ধারন করে আছে। মৃত্যুর খবর শোনার পর ছেলে জারীফুর রাজ্জাক চেীধুরী বলছিলো, যেদিন দেখা হতো কামরান চাচা দুর থেকে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে নিতেন। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতেন। আর বলতেন, ভাল করে পড়ালেখা করে অনেক বড় মানুষ হও।
অনেকেরই জানা ২০১২ সালে আমি মারাতবকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি । তাৎক্ষনিকভাবে তখন নগরীর শিবগঞ্জস্থ অস্থায়ি নুরজাহান হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করা হয়।সেদিন আমি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে খবরটি জানার পর আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক বন্ধুরা ছাড়াও নানা পেশার মানুষজন হাসপাতালে আমাকে দেখতে আসেন,পাশে দাঁড়ান।তখন সিলেট সিটি মেয়র ছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। কামরান ভাই দেখতে এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চলে যান।বর্তমান মেয়র বন্ধু আরিফুল হক চেীধুরীও তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান দুদুকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে দেখতে আসেন।এছাড়া আওয়মীলীগের আ ন ম শফিক,সফিকুর রহমান চেীধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়িসহ সর্বস্থরের মানুষ আমাকে সেদিন দেখতে এসেছিলেন।সেই নাম গুলো আর উল্লেখ করছিনা।তবে যারা সেদিন দেখতে এসেছিলেন অথবা দুর থেকে দোয়া করেছিলেন তাদের সবার প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
হাসপাতালে যাবার প্রায় ৫দিন কেটে গেছে। দিন যত গড়াচ্ছে চিকিৎসা ব্যায়টাও বেড়ে চলেছে।তবে বিদেশ থেকে আমার স্বজনরা যোগাযোগ করছেন।তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি পেয়ে হাসপাতালের অর্ধেক বিল পরিশোধও করে ফেলেছি।বাকিটার জন্য ভাবনা চিন্তা না করার জন্য আমার স্ত্রীকে স্বজনরা আশ্বস্থ করেছেন। অবস্থাটা যখন এমন ঠিক তখনই কামরান ভাইয়ের ফোন। ধরেছেন আমার স্ত্রী ।কামরান ভাই বলছিলেন, ভাবী হাসপাতালের বিল কতো এসেছে।তখন আমার স্ত্রী বিস্তারিত বলেন।এও বলেন যে, স্বজনরা বলছেন বাকিগুলো পাঠাচ্ছেন।কিন্তু সব কিছু শোনার পরও কামরান ভাই বলেন,ভাবী কাউকে শোনানোর দরকার নেই। এমনকি সাংবাদিক ভাইদেরও না ।বাকি বিলটা আর আপনাদের দিতে হবেনা।তিনি আরো বলেন,আমি এখনই হাসপাতাল কতৃপক্ষকে বলে দিচ্ছি।আপনারা যখন ডিসচার্জ নেয়ার নিয়ে চলে যাবেন। এই যে স্নেহ ভালবাসা,অভিবাবকের মতো আচরণ এগুলো কি ভুলা যাবে কোনদিন। এগুলোর কথা বলতে গেলে কি চোখে আসবেনা দু’ফোটা জল।মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে ছেলেকে কলেমা পড়তে বলে বিদায় নেয়া প্রিয় কামরান ভাইকে যেনো আল্লাহপাক জান্নাতুল ফেরদৌসে জায়গা দেন সেটাই আমার কামনা।
কামরান ভাইকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যতে সিলেটের ইতিহাস লেখা যাবেনা এটাই সত্য। কারন তিনি সিলেট পৌরসভার শেষ চেয়ারম্যান আর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র । কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আরেকটি কারনেও তিনি সিলেটের ইতিহাসে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উদাহরণ হয়ে থাকবেন। আর সেটি হলো অমায়িক ব্যবহার আর মানুষকে সম্মানিত করে নিজে সম্মানিত হওয়ার মানসিকতাকে লালনের জন্য।বিগত সিটি নির্বাচনের পর একদিন একান্তে আলাপ করছিলাম । এ সময় বলে উঠেন ‘আর যাই হোক রুনু ভাই, সিলেটের সাংবাদিক সমাজের প্রায় সবাই আমার জন্য কাজ করেছে এটা আমি মনে করি। সাংবাদিকদের প্রতি এমন আস্থা বিশ্বাস ছিলো তাঁর।
আরেকটা কথা উল্লেখ করতে চাই। বিগত সিটি নির্বাচনের সময় আমার কর্মক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এই সমস্যাটিও আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে নিরসন করে দেন কামরান ভাই।আমি তখন ঢাকায়। ফোন করে বলার পর তখন আমার সহকর্মী আশরাফুর রহমান জুয়েলকে তিনি একটি কাগজ সই করে দেন।তাই কামরান ভাইকে ভুলে থাকা আমার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব হবেনা।
সবশেষে বলবো প্রিয় মানুষের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে চোখের ঘুম কেড়ে নিলো স্মৃতির পাহাড়।সেই পাহাড় থেকে অনেকগুলো স্মৃতির টুকরো আপনাদের মাঝে আজ বিলিয়ে দিলাম। বাকিটা না হয় আমার নিজের কাছেই রেখে দিলাম।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ- মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
মোবাঃ- ০১৭১২ ১৭ ৪৭ ৯৬
ইমেইলঃ- newssylbangla@gmail.com
রংমহল টাওয়ার ৪র্থ তলা বন্দর বাজার, সিলেট।
Design and developed by M-W-D