দিনরাত ডেস্কঃ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, শুধু সাজা দিলেই সমাজ অপরাধমুক্ত হবে না। ফাঁসি সমাজকে রক্ষা করতে পারে না।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতের চেয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি (ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন) কোনো অংশেই খারাপ না। ২০১৯ সালে ভারতে ১২১ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আর আমাদের এখানে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ৩২৭ জনের। আমাদের এখানে স্ত্রী হত্যায় (ওয়াইফ কিলিং) স্বামীর ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হচ্ছে। কিন্তু ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের এই সাজায় কী স্ত্রী হত্যা (ওয়াইফ কিলিং) কমেছে? কমেনি। সুতরাং এটা ভুল ধারণা যে সাজা দিলেই সমাজ দুধের সাগরে ভাসবে, আমরা অপরাধ মুক্ত হয়ে যাব।
শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় নিজ সন্তানকে হত্যা করে বাবা। এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী। মামলায় স্বামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরে বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। যা পরবর্তীতে হাইকোর্টেও বহাল রাখেন। এই মামলার আপিল শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। মামলার শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মামলার নজির তুলে ধরা হয়।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ঘটনাটি ছিল আকস্মিক। শাশুড়ির অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারান ওই বাবা। সে সময় তিনি নিজেকেও হত্যা করতে পারতেন কিংবা শাশুড়িকে হত্যা করতে পারতেন। অর্থাৎ ঘটনাটি কোনো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সবপক্ষ শুনে সন্তান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পিতার সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। দায়ের করা এই মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই কারাভোগ করছেন আসামি। আজকের রায়ের হিসাবে তার সাজাও শেষ হয়ে গেছে। তাই আসামি জসিমের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় আদালত তাকে কারামুক্তি দিতে নির্দেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় নিয়োগকৃত আইনজীবী ছিলেন মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
এই মামলার বিবরণে জানা যায়, বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জসিম বাড়ী ২০০৭ সালে শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে নিজ সন্তানকে হত্যা করে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।