গ্যাস লাইনের উপর থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ, ওয়াকওয়ে করবে সিসিক

প্রকাশিত: ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২১

গ্যাস লাইনের উপর থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ, ওয়াকওয়ে করবে সিসিক

মাটির নিচ দিয়ে চলে গেছে উচ্চচাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইন। উপরে নির্মাণ করা হয়েছে একতলা থেকে শুরু করে পাঁচতলা পর্যন্ত ভবন। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। অথচ উচ্চচাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইনের উভয় পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুটের মধ্যে কোন স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। লাইন স্থাপনের সময় এই জায়গাও অধিগ্রহণ করেছে জালালাবাদ গ্যাস। গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে এতোদিন বেশ ভালই ভোগদখল করে আসছিলেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু চলতি বছর থেকে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামলে মাথায় হাত পড়ে ভবন মালিকদের। গতকাল রবিবার সিলেট নগরীর ৮নং ওয়ার্ডের কালিবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জালালাবাদ গ্যাস ও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উদ্ধারকৃত ভূমি যাতে পুণরায় বেদখল না হয়ে যায়, এজন্য দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

 

জানা গেছে, দেবপুর থেকে কুমারগাঁও পর্যন্ত জালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কয়েকশ’ কিলোমিটার উচ্চচাপবিশিষ্ট সঞ্চালন লাইন রয়েছে। গ্যাস লাইন স্থাপনের সময় উভয় পাশের ১০ ফুট করে অধিগ্রহণ করে গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এরপর নজরদারি না থাকায় গ্যাস লাইনের উপর ও উভয় পাশে প্রভাবশালীরা গড়ে তোলেন স্থাপনা। পাঁচতলা পর্যন্ত ভবন তৈরি করেন কেউ কেউ। ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে কেউ কেউ জালালাবাদ গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গার দখল বিক্রিও করেন। গেল বছর নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে মসজিদের কয়েকজন মুসল্লীর মৃত্যুর ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে শুরু হয় উচ্চচাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইনের জায়গা দখলমুক্ত অভিযান। চিহ্নিত করা হয় পাঁচশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। ১৬ মার্চের পর ২৬ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর আরো দুইদফা অভিযান চালানো হয়। ওই সময় প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের উপর ও উভয় পাশ থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সর্বশেষ গতকাল রবিবার সকালে সিসিকের সহযোগিতায় নগরীর কালিবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় জালালাবাদ গ্যাস। উচ্ছেদ করা হয় অন্তত ৪০টি স্থাপনা। তবে স্থাপনার মালিকদের অনেকে বলছেন, বংশপরস্পরায় তারা বাসা-বাড়ি করে এই জায়গায় বসবাস করছেন। তাদের স্থাপনা যে অবৈধ সেটাও তারা জানেন না। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষও এর আগে তাদেরকে কোন নোটিশ করেনি। হঠাৎ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ায় তারা এখন বাস্তুহারা হয়ে গেছেন।

 

 

তবে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে অনেকবারই নোটিশ দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। আর যারা স্বেচ্ছায় সরাননি তাদের স্থাপনা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। জালালাবাদ গ্যাসের অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে বসতবাড়ী স্থাপিত উচ্ছেদ সংক্রান্ত ট্রাক্সফোর্স কমিটির সদস্যসচিব, কোম্পানির ডিজিএম আমিরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস নিরাপত্তা আইনে রয়েছে উচ্চচাপবিশিষ্ট গ্যাস পাইপলাইনের উভয় পাশে নূন্যতম ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুটের মধ্যে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা বিধিববহির্ভূত। অভিযানের পূর্বে বছরখানেক সময় ধরে কয়েকবার দখলদারদের নোটিশ দেয়া হয়। পাশাপাশি মৌখিকভাবেও তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

 

 

এদিকে, উচ্ছেদ অভিযানের পর ফের যাতে গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গা দখল না হয় সেজন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, বালুচর থেকে কুমারগাঁও পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সেখানে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ওয়াকওয়ের উভয়পাশে বাগান করা হবে। যাতে পুণরায় কেউ যাতে এই জায়গা দখল করতে না পারে।

 

হাবিবা আক্তার জেছি //

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ