মিসরে একের পর এক মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার, জাতিসংঘের নিন্দা

প্রকাশিত: ১:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২০

মিসরে একের পর এক মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার, জাতিসংঘের নিন্দা

দৈনিক দিনরাত সংবাদ

কয়েক দিনের ব্যবধানে মিসরের শীর্ষ একটি মানবাধিকার গ্রুপের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের দাবি এই অ্যাকটিভিস্টরা সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য সন্দেহভাজন। তবে মিসরীয় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া নাগরিক সমাজের ওপর মারাত্মক হতাশাজনক প্রভাব ফেলবে এসব গ্রেফতারের ঘটনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে ওঠে। সেই সুযোগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বে মুরসি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তারপর দুই দফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছেন তিনি। নিজেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখতে গত বছর সংবিধানও সংশোধন করেছেন তিনি। মানবাধিকার গ্রুপগুলোর অভিযোগ,সিসির আমলে ভিন্নমতালম্বীদের ওপর দমনপীড়ন জোরালো হয়েছে। কারাগারে ঢোকানো হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। এছাড়া বহু অ্যাকটিভিস্টকেও কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। তবে বরাবরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সিসির সরকার।

অ্যাকটিভিস্টদের গ্রেফতারের ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার আটক করা হয় দেশটির মানবাধিকার গ্রুপ ইজিপশিয়ান ইনিশিয়েটিভ ফর পার্সোনাল রাইটস (ইআইপিআর) এর প্রধান গাসের আবদেল-রাজেক। এরও আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে তার দুই সহকর্মীকেও আটক করা হয়।

রাজনৈতিক, নাগরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকে ইজিপশিয়ান ইনিশিয়েটিভ ফর পার্সোনাল রাইটস (ইআইপিআর)। শুক্রবার গ্রপটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রাজধানী কায়রোর দক্ষিণ অঞ্চলের মাদি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গাসের আবদেল-রাজেককে আগের দিন (বৃহস্পতিবার) নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করেছে আর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অজ্ঞাত স্থানে।

ইআইপিআর জানিয়েছে, আবদেল-রাজেককে গ্রেফতারের আগে বুধবার তাদের ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ক পরিচালক করিম এননারাহকে দাহাব এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারও আগে গত রবিবার তাদের অফিস ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বশিরকে কায়রো থেকে গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার অভিযোগ আনা হলেও তার তদন্তের সুরাহা এখনও বাকি রয়েছে।

এসব গ্রেফতারের ঘটনাকে গ্রুপটির কাজের বিরুদ্ধে স্পষ্ট এবং সমন্বিত প্রতিক্রিয়া বলে বর্ণনা করেছে ইআইপিআর। এই মানবাধিকার গ্রুপটি অন্যান্য কাজের পাশাপাশি মিসরের বিভিন্ন আটক কেন্দ্র এবং মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ইআইপিআর বলছে, আবদেল-রাজেককে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মিসরের একটি সংঘবদ্ধ এবং বৈধ মানবাধিকার গ্রুপের কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছে সরকারি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেছেন, ভিন্ন মতালম্বীদের থামানো এবং তাদের দমনের একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে এসব মানবাধিকার অ্যাকটিভিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাবে সন্ত্রাস দমন আইন এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া বা ভুয়া তথ্য ছড়ানো মতো অস্পষ্ট অভিযোগের ব্যবহার আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মিসর তা মেনে চলতে বাধ্য।

Source বাংলা ট্রিবিউনঃঃ

(Faisal Ahmed)